ব্যাংক এশিয়া চেয়ারম্যানের স্ত্রী-কন্যার বৈদেশিক মুদ্রা খরচের ক্ষেত্রে ভয়ংকর অনিয়ম
ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফের স্ত্রী ও কন্যার নামে ইস্যু করা দুটি ক্রেডিট কার্ড থেকে বিদেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচের ক্ষেত্রে ভয়ংকর অনিয়মের তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকটির রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের বিপরীতে ইস্যু করা এই দুটি কার্ড থেকে যথাক্রমে দেড় লাখ (১,৫০,০০০) ডলার এবং ৬৮ হাজার ডলার খরচ করা হয়েছে, যা বার্ষিক খরচের নির্ধারিত সীমার চেয়ে বহুগুণ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে এই চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, খোলা বাজার (কার্ব মার্কেট) থেকে সংগ্রহ করা ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধ করে বিদেশে পাচার করার উদ্দেশ্যেই এই লেনদেনগুলো করা হয়েছে।
এই ঘটনায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘনের দায়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংক এশিয়াকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিধান অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশি নাগরিক বছরে ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বিদেশে খরচ করতে পারেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যানের স্ত্রী ফারহানা করিম এবং তার মেয়ে আলায়না চৌধুরীর আরএফসিডি হিসাব ব্যবহার করে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। পরিদর্শনে দেখা যায়-
*পুরনো ভ্রমণের তথ্য ব্যবহার:* ফারহানা করিম প্রায় এক বছর আগের বিদেশ ভ্রমণের তারিখ দেখিয়ে তার আরএফসিডি হিসাবে একাধিকবার বৈদেশিক মুদ্রা জমা করেছেন।
*ঘোষণা ছাড়াই জমা:* কোনো ঘোষণা ছাড়াই একই দিনে একাধিকবার ১০ হাজার ডলারের বেশি নগদ বৈদেশিক মুদ্রা জমা করার ঘটনাও পাওয়া গেছে।
*বিদেশে থেকেও দেশে ডলার জমা:* সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, কার্ডের গ্রাহকরা যখন বিদেশে অবস্থান করছিলেন, ঠিক সেই সময়েই দেশের ভেতর থেকে তাদের আরএফসিডি অ্যাকাউন্টে নগদ ডলার জমা হয়েছে। আলায়না চৌধুরীর কার্ডের ক্ষেত্রে, তিনি বিদেশে থাকা অবস্থায় দেশ থেকে তার হিসাবে নগদ ৬৮ হাজার ডলার জমা হয়। ফারহানা করিমের হিসাবেও একই ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেছে।
*কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ* বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশীয় কার্ব মার্কেট (খোলা বাজার) থেকে সংগ্রহ করা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে আরএফসিডি হিসাবে জমা করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিদেশে অর্থ পাচার করে তা ব্যয় করা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংকের প্রত্যক্ষ সহায়তা বা সংশ্লিষ্টতা ছাড়া নিয়ম ভেঙে ধারাবাহিকভাবে এত বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আরএফসিডি হিসাবে জমা করে বিদেশে ব্যয় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত করার জন্য ব্যাংকগুলোর সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্টিং (এসটিআর) পদ্ধতি রয়েছে। এই নিয়ম যথাযথভাবে পরিপালিত হচ্ছে কিনা, তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি আরও জোরদার করতে হবে।”
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
