২১ বছরে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন পাস, খতিয়ে দেখা হবে কারণ

১৬ অক্টোবর ২০২৫, ৫:০৬:৫২

চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হারে ধস নেমেছে। যা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম পাসের হারে রেকর্ড। ২০০৫ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই পাসের হার বেড়েছে বা সামান্য কম-বেশি হয়েছে। কিন্তু এবার ২১ বছরের পর শিক্ষার্থীদের ফলাফলে বড় ধাক্কা এসেছে।

এবার দেশের নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার হয়েছে ৫৭ দশমিক ১২ শতাংশ-যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ কম। তবে শুধু পাসের হার নয়, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বিপুল পরিমাণে কমেছে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন। কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে, ৬৩ হাজার ২১৯ জনে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৪২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ১৬৬ জন। গত বছর ১ হাজার ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে সব শিক্ষার্থী পাস করলেও এবার নেমে এসেছে মাত্র ৩৪৫–এ। অন্যদিকে, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২, যা গত বছর ছিল মাত্র ৬৫টি।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যানুসারে, ২০০৫ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৫৯ শতাংশের বেশি। ২০০৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬৪ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৬৪ শতাংশের ওপরে, ২০০৮ সালে প্রায় ৭৫ শতাংশ হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে তা কমে যায় ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশে। এর পরবর্তী বছরগুলোতে পাসের হার ৭০-৮০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। শুধু তিন বছর (২০১৫, ২০১৭ ও ২০১৮) ৭০ শতাংশের নিচে নেমেছিল।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সরাসরি পরীক্ষা হয়নি-ফলে ‘বিশেষ প্রক্রিয়ায়’ সবাই উত্তীর্ণ হয়। এরপর ২০২১ ও ২০২২ সালে ভিন্ন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় পাসের হার ছিল এক বছর ৮৪ শতাংশের বেশি, আরেক বছর ৯৫ শতাংশের বেশি। কিন্তু ২০২৩ সালে তা আবার ৮০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। গতবছর বছর এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ২০২৩ সালের চেয়ে কমে যায়।

‘ফলাফল কেন খারাপ হলো তা পর্যালোচনা করে খুঁজে বের করা হবে’

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল কেন খারাপ হলো তা পর্যালোচনা করে খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানান তিনি।

ড. আবরার জানান, এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল অনেককেই বিস্মিত করেছে। পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম। এর উত্তর জটিল নয় অস্বস্তিকর। তিনি বলেন, দেশের শিক্ষার মূল সংকট প্রাথমিক স্তর থেকেই শুরু হয়। সেই ঘাটতি বছরের পর বছর জমা হয়। দীর্ঘদিন আমরা সেই বাস্তবতার মুখোমুখি হইনি। আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছে। পাশের হার সেখানে সাফল্যের প্রতীক আর জিপিএ-৫ এর সংখ্যা তৃপ্তির মানদণ্ড।

তিনি আরও বলেন, ‘ভালো’ ফলাফল দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। আমি চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা আবারও বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করুক।

উপদেষ্টা বলেন, সকল শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি ভবিষ্যতে বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়নে, সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বোচ্চ ন্যায্যতা বজায় রাখতে। একই সঙ্গে ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত যেন না হয় তা খেয়াল রাখতে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ‘অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি’ নয়, বরং ‘ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা’কে বেছে নিয়েছি। সাহস করে বাস্তবতা স্বীকার না করলে মেধাবী ও আগামী প্রজন্মের প্রতি অন্যায় হবে।

উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডকে তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার স্বতন্ত্র পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করেছি। তারা তথ্য বিশ্লেষণ করে শেখার মূল ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করবে।

‘এবারের এইচএসসির ফলাফল নিয়ে অভিভাবকদেরও ভাবতে হবে’

এদিকে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির জানিয়েছেন, এবারের এইচএসসির ফলাফলে বাস্তব চিত্র সামনে এসেছে। শিক্ষার্থীরা এখন পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে গেছে। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদেরও ভাবতে হবে।

তিনি জানান, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে ফেল করেছে। বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী ইংরেজিতে পাসের হার নেমে এসেছে ৭৭ শতাংশ থেকে ৫৮ শতাংশে, যা গত ২ দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।