সারাদেশে বেহাত ওয়াক্ফ সম্পত্তি উদ্ধারে অভিযান শুরু হচ্ছে

৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:২২:৪৫

সারাদেশে বেহাত তথা বেদখল হওয়া ওয়াক্ফ সম্পত্তি উদ্ধারে অভিযান শুরু হচ্ছে। এই অভিযানে নিজেই নেতৃত্ব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। বুধবার (০৬ আগস্ট) সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বাসসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘এরই মধ্যে উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ জেলায় ওয়াকফের বেদখল হওয়া ৫২ বিঘা সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ সারাদেশে পর্যায়ক্রমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব উদ্ধার অভিযানে অংশ নেবে। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বিভিন্নস্থান থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি পবিত্র ধর্মবোধ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জনকল্যাণে দান করে গেছেন। এই ওয়াক্ফ সম্পত্তি কারো দখলে থাকুক এটা সরকার সহ্য করবে না। এটা সরকারের কাছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পবিত্র আমানত। যে কোনো মূল্যে সেই আমানত রক্ষা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে ধর্ম মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয়ে নিবন্ধিত থাকা সম্পত্তির মধ্যে ৮৫ হাজার ৫৭২ একর ভূমি বেহাত হওয়ার একটি হিসাব মন্ত্রণালয়ের কাছে রয়েছে। বর্তমানে নিবন্ধিত ওয়াক্ফ এস্টেট সারাদেশে প্রায় ২২ হাজার। এগুলোর অধীনে জমি আছে চার লাখ ২৪ হাজার ৭৪ একর।’

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুগ যুগ ধরে মুসলিম সমাজে বিশ্বাসের ভিত্তিতে ওয়াক্ফ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। কেবল মুখে সম্পত্তি ওয়াক্ফ করে যাওয়ার পরও বংশধররা এবং স্থানীয় সমাজভিত্তিক কমিটি মসজিদ-মাদ্রাসা পরিচালিত করে আসছেন, এমন নজির অনেক আছে। এ খাতের সম্পত্তি থেকে জনকল্যাণের কাজ সুনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনার জন্য ব্রিটিশ আমলে প্রথম ১৯৩৪ সালে বেঙ্গল ওয়াক্ফ অ্যাক্ট পাস হয়। পরে পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সংশোধিত আইন পাশ হয়।

মসজিদ ও মাদ্রাসার বেহাত ওয়াক্ফ সম্পত্তি নিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক বড় বড় মসজিদ ও মাদ্রাসার ওয়াক্ফ সম্পত্তি আছে, এগুলো বেহাত হয়ে অন্যায়ভাবে ভোগ করছে অনেকে।’

তিনি বলেন, ‘ওয়াক্ফ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি ওয়াক্ফ সম্পত্তির একটি ডিজিটালাইজড প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। যাতে সহজে কেউ ওয়াক্ফ সম্পত্তি দখলে নিতে না পারে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘ওয়াকফের বহু সম্পত্তির প্রয়োজনীয় দলিল অনেকে গোপন করে রেখেছেন। যেমন ধরুন একজনের দাদা ওয়াক্ফ সম্পত্তি দিয়েছেন, এখন তার নাতিরা এ সম্পত্তির দলিলপত্র লুকিয়ে রেখেছেন। এগুলো বের করা কঠিন কাজ। তবে আশা করছি, বেশ কিছু মসজিদ ও মাদ্রাসা ওয়াক্ফ প্রশাসনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো।’

তিনি জানান, অনেকে উচ্চ আদালতে মামলা করে বছরের পর বছর ওয়াক্ফ সম্পত্তি দখলে রেখে ভোগদখল করে আসছে। এখন থেকে সেই সুযোগ আর পাবে না। কারণ, আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় হাইকোর্টে আলাদা একটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। যেখানে দুইজন বিচারপতি শুধু ওয়াক্ফ সম্পত্তির মামলাগুলো দেখবেন। আশা করি এই পদক্ষেপের কারণে দ্রুতই ওয়াক্ফ সম্পত্তি নিয়ে চলমান মামলাগুলো নিষ্পত্তি হবে।’

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।