সারজিসকে নিয়ে সমালোচনার ঝড়, প্রশ্ন তুললেন সমন্বয়কই
এবার এক সপ্তাহের মধ্যে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন কার্যকর না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রিফাত তার নিজস্ব প্রোফাইলে এক পোস্টে এই হুঁশিয়ারি দেন। ওই পোস্টে রিফাত লিখেছেন, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনকে এক সপ্তাহের মাঝে ফাংশনাল (কার্যকর) করুন। অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বস্তরের জনগণ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো।
এই পোস্টের নিচে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম কমেন্টে বলেছেন, আন্দোলন করতে হবে না। তুই এর দায়িত্ব নে।
রিফাত কমেন্টের উত্তর দিয়ে বলেন, আমি কেন দায়িত্ব নেবো? আপনি এক্সপার্ট লোকজন আনতেছেন না কেন? মেডিক্যাল, হেলথ ইকোনমিকসসহ এই সেক্টরের এক্সপার্ট মানুষজন আনেন। সারাদেশে অসংখ্য গ্রুপ আর্কাইভ+স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে স্টাবলিশ হইসে। এদের ইনক্লুড করেন। টিমটা বড় করেন। ভ্যারিফিকেশন সেলটাকে আরও বড় করেন।
এর কয়েক ঘণ্টা পর রিফাত আরেক পোস্টে লিখেছেন, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জন্য ফুলটাইম কাজ করবে এমন বড় একটা এক্সপার্ট টিম অবিলম্বে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতি শুক্রবার একটা জেলা সফরের ফালতু ট্রেন্ড বাদ দিতে হবে।
সারজিসের সমালোচনা করে চীনের গুইলিন ইউনিভার্সিটি অব ইলেকট্রনিক টেকনোলজির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জিহাদী ইহসান বলেন, যে দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা নাই সে দায়িত্ব নিয়েছো কেন? ছোটলোকের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো পাইলে সব খাইতে চায়, হজম করার কথা ভুলে যায়। কত বড় আহাম্মক হলে রিফাতকে বলে- ‘তুই কাল থেকে দায়িত্ব নে’।
রিফাতের মন্তব্যে সারজিস যে জবাব দিয়েছেন তার সমালোচনা করেছেন কবি হাসান রোবায়েত। তিনি বলেন, অ্যাকাউন্টিবিলিটি (জবাবদিহিতা) নাই অথচ অভিমান আছে। বাহ! শুধু এই দায়ীত্বজ্ঞানহীন রিপ্লাই দিয়ে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ইমিডিয়েট তার রিজাইন/স্যাক দেওয়া/করা উচিত।
আরেক পোস্টে হাসান রোবায়েত বলেন, ‘জুলাই ফাউন্ডেশনে হেল্প পাইতে সুপারিশ লাগবে কেন? একজন যোদ্ধার ক্ষতস্থানই কি তার সুপারিশের জন্য এনাফ নয়? সুপারিশকারীরাই কি তাহলে নয়া পাওয়ার হাউস?বাংলাদেশের সবচেয়ে অথর্ব ফাউন্ডেশন কি জুলাই ফাউন্ডেশন?’
জুলাই ফাউন্ডেশন ও সারজিসকে নিয়ে দেওয়া রিফাতের বক্তব্য সমর্থন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সরকারের পলিসি ও প্ল্যানিং প্রফেশনাল দিলশানা পারুল। রিফাতের পোস্ট শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘আমি তার এই বক্তব্য সত্যিই পছন্দ করেছি। তার দাবি সুস্পষ্ট এবং খুবই গণতান্ত্রিক। তারা প্রকাশ্যে জবাবদিহি চাইছে’।
আরেক পোস্টে দিলশানা পারুল লেখেন, জুলাই ফাউন্ডেশন নিয়ে আমার সীমিত যোগাযোগ থেকে যা জানতে পেরেছি, তা হলো- জুলাই ফাউন্ডেশনের ওয়েবপেজে ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কোনো সংখ্যার ভিত্তি নেই। মিনিস্ট্রি যতজনকে ভেরিফাই করে, ফাউন্ডেশন সেই সংখ্যাটাই ভেরিফায়েড হিসেবে গ্রহণ করে। সরকার যাদের ভেরিফাই করেনি, ফাউন্ডেশন তাদের টাকা দিতে পারে না। যদি সরকারের দ্বারা ভেরিফাইড না হওয়া কেউ ফাউন্ডেশনে আসে, তাহলে ফাউন্ডেশন সেটা ভেরিফিকেশনের জন্য হেলথ মিনিস্ট্রিকে পাঠায়। মিনিস্ট্রি সেটা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায়। জেলা প্রশাসক সরেজমিনে তথ্য নিয়ে ভেরিফাই করে সেটি হেলথ মিনিস্ট্রিতে পাঠান। হেলথ মিনিস্ট্রি তথ্য ইনফরমেশন সিস্টেমে দিলে তখন ফাউন্ডেশন সেই ব্যক্তিকে টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।
এখানে আমলারা অনেক সময় দেরি করেন। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী এই ভেরিফিকেশন ৪ দিনের মধ্যে করা উচিত, কিন্তু আমি শুনেছি এটি ৪ দিনে কখনই সম্পন্ন হয় না। এছাড়া ফাউন্ডেশনে আবেদন করার সময় আহতদের অনেকগুলো চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হয় (এটা মনীষা আপার পোস্ট থেকে আগেই জেনেছি)। এই প্রক্রিয়াটি পরিবর্তন করে ফাউন্ডেশন নিজেই কাগজগুলো অথেনটিক কিনা যাচাই করতে পারত। এটি হাসপাতালগুলোকে ফোন করে খুব সহজেই করা সম্ভব। কিন্ত যতদূর জানলাম মন্ত্রণালয় এ দায়িত্ব এখনো ছাড়েনি বা ছাড়তে রাজি নয়।
বর্তমানে আহতদের নিজ উদ্যোগে মেডিকেল ডকুমেন্টগুলো হাসপাতাল থেকে সত্যায়িত করে জমা দিতে হয়, যা তাদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য। ফাউন্ডেশনের উচিত এ প্রক্রিয়াটি সহজ করে আহতদের কাগজপত্র নিজেই যাচাই করে নেওয়া।
আমরা কোভিডের সময়ই বুঝতে পেরেছি আমাদের হেলথ মন্ত্রণালয়টা আসলে কী জিনিস। এখন মনে হচ্ছে, মন্ত্রণালয় জুলাই ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে যেন তাদের উপর কোনো অতিরিক্ত দায়িত্ব না পড়ে এবং সহজে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপানো যায়।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।