বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ, শীর্ষস্থান হারালেন ইলন মাস্ক

২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৮:০২

ইলন মাস্ককে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এখন ফরাসি ধনকুবের বার্নার্ড আর্নল্ট। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোর্বসের মতে, ধনকুবের বার্নার্ড আর্নল্ট ও তাঁর পরিবারের মোট সম্পদ ২৩.৬ বিলিয়ন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

বিলাস দ্রব্য কম্পানি এলভিএমএইচের ধনকুবের চেয়ারম্যান ও সিইও আর্নল্টের মোট সম্পদের পরিমাণ শুক্রবার টেসলার সিইও মাস্কের মোট সম্পদ ২০৪.৭ বিলিয়ন ডলারকে অতিক্রম করে। মাস্কের ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ কমে যাওয়ায় তিনি পিছিয়ে পড়েছেন বলে ফোর্বস জানিয়েছে।

ফোর্বসের রিয়েলটাইম তালিকা অনুসারে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবের হলেন :

১. বার্নার্ড আর্নল্ট ও তাঁর পরিবার (২০৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ২. ইলন মাস্ক (২০৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ৩. জেফ বেজোস (১৮১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ৪. ল্যারি এলিসন (১৪২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ৫. মার্ক জাকারবার্গ (১৩৯.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

৬. ওয়ারেন বাফেট (১২৭.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ৭. ল্যারি পেজ (১২৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ৮. বিল গেটস (১২২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ৯. সের্গেই ব্রিন (১২১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ১০. স্টিভ বলমার (১১৮.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

তবে ব্লুমবার্গের ধনকুবেরের তালিকা অনুসারে, ইলন মাস্ক এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, যার মোট সম্পদ ১৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ১৮৪ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে তালিকায় ইলন মাস্কের পরেই রয়েছেন। এই তালিকায় বার্নার্ড আর্নল্ট ১৮৩ বিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।

কে এই বার্নার্ড আর্নল্ট?
১৯৪৯ সালে ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় শহর রোবেইক্সের এক ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম আর্নল্টের। তার পরিবারের ভবন নির্মাণের ব্যবসা ছিল। ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ইকোল পলিটেকনিক থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর পারিবারিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ফেররেট স্যাভিনেলে যোগ দেন তিনি। ১৯৭৮ সালে ওই কোম্পানির চেয়ারম্যান হন।

এর ছয় বছর পর ১৯৮৪ সালে দেনার দায়ে প্রায় ডুবে যাওয়া টেক্সটাইল কোম্পানি ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর কিনে নেন আর্নল্ট। বিপুল পরিমাণ অপরিশোধ্য ব্যাংক ঋণের বোঝা থাকায় কোম্পানিটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছিল ফরাসি সরকার। তবে দেউলিয়া হয়ে পড়লেও ফ্রান্সের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্র্যান্ড ছিল ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর।

দেনায় জর্জরিত ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর আর্নল্টের নেতৃত্বে ফের ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবং একসময় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল পণ্যের কোম্পানি হিসেবে জায়গা করে নেয়। এলভিএমএইচের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘‘দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে ক্রিশ্চিয়ান ডায়োরকে তিনি পুনরুজ্জীবিত করেছেন এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি কোম্পানিতে রূপান্তর করেছেন।’’

এরপর ১৯৮৯ সালে নিজের মালিকানাধীন কোম্পানি লুই ভিটন, ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর, হাবলট এবং লে পার্সিয়ান নিয়ে গঠন করেন এলভিএমএইচ গ্রুপ অব কোম্পানিজ। গ্রুপের অধিকাংশ শেয়ারের মালিকানা নিজের হাতে রাখায় এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও শীর্ষ নির্বাহী হন আর্নল্ট। এখনও এই পদেই আছেন তিনি।

তিন দশকের বেশি সময় ধরে আর্নল্ট এলভিএমএইচকে বিলাসবহুল শৌখিন পণ্যের পাওয়ার হাউসে পরিণত করেছেন। শ্যাম্পেন, ওয়াইন, ফ্যাশনেবল পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ঘড়ি, গয়না, প্রসাধনী ও পারফিউম পণ্যের এক বিরাট সম্ভার এলভিএমএইচ। বর্তমানে সারাবিশ্বে এলভিএমএইচের সাড়ে ৫ হাজার শোরুম বা আউটলেট আছে।

ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি নয় ১৯৯২ সালে চীনের রাজধানী বেইজিংয়েও নিজেদের গ্রুপভুক্ত কোম্পানি লুই ভিটনের শোরুম খোলে এলভিএমএইচ। এভাবে এশিয়ার বৃহত্তম বাজারেও নিজের আধিপত্য জানান দেন ইউরোপের এই ধনকুবের।

ব্যক্তিজীবনে বার্নার্ড আর্নল্ট দু’বার বিয়ে করেছেন; তার ৫ সন্তান রয়েছে। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুসারে, আর্নল্টের পরিবারের প্রত্যেকেই তার প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচ বা এর অন্তর্ভুক্ত কোনো ব্র্যান্ডের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।