প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারটির বেঁচে রইল না কেউ

৫ এপ্রিল ২০২৫, ৩:৪৯:২৮

সংগৃহীত

প্রচিলত কথায় আছে একটি সড়ক দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। কিন্তু সম্প্রতি এমনই এক দুর্ঘটনা ঘটল যেখানে পরিবারে কান্না করারও কেউ অবশিষ্ট রইল না।  মা-বাবা ও দুই বোনের পর মৃত্যুর কাছে হার মানলেন পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য কলেজছাত্রী তাসনিয়া ইসলাম প্রেমাও।  

গত বুধবার (২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রফিকুল ইসলাম শামীম, তার স্ত্রী লুৎফুন নাহার সুমি এবং তাদের দুই মেয়ে আনীসা আক্তার (১৪) ও লিয়ানার (৮)। তবে সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান পরিবারের একমাত্র সদস্য প্রেমা।  তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার আর ঘুম ভাঙেনি।  চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রেমার (১৮) মস্তিষ্ক গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  তার পরও জ্ঞান ফেরাতে সব ধরনের চেষ্টা চালান চিকিৎসকরা। প্রথমে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিনই প্রথম রোগী হিসেবে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।  সেখানে প্রায় তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকলেও জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসকদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে না-ফেরার দেশেই চলে যান তিনি। মা-বাবা ও দুই বোনের পর তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই পরিবারটির আর কেউ বেঁচে রইল না। এ নিয়ে লোহাগাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১। 

পরিবারের সবার মৃত্যুর কারণে হাসপাতালে প্রেমাকে ভর্তির পর থেকেই পাশে ছিলেন তার ছোট মামি জেসমিন রহমান।  প্রেমার মৃত্যুর সংবাদ আসার পর থেকেই তার বিলাপ ও কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের চারপাশ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জেসমিন বলেন, আল্লাহ পরিবারের শেষ অবলম্বনটুকুও রাখল না। কী অপরাধ ছিল তাদের? 

চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশিদ বলেন, প্রেমাকে বাঁচাতে সব ধরনের চেষ্টাই করেছি আমরা। দুর্ঘটনায় তার মস্তিষ্ক গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। যে কারণে ঘটনার পর থেকেই তিনি সংজ্ঞাহীন ছিলেন। হাসপাতালে আনার পর থেকেই প্রেমার মস্তিষ্কের মাত্রার অবস্থা ছিল খুব খারাপ।ছিল বলে জানান হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল। তিনি বলেন, প্রাণে বাঁচলেও বাসের ধাক্কায় প্রেমার মাথা গুরুতরভাবে আঘাতগ্রস্ত হয়। 

প্রেমার স্বজন জানান, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই দুই পরিবারের সদস্যরা নানা পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করেন। অবশেষে ছুটিতে রফিকুল ও লুৎফুন দম্পতি তাদের তিন মেয়ে এবং রফিকুলের সহকর্মী ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দিলীপ বিশ্বাস, তার স্ত্রী সাধনা মণ্ডল ও ছয় বছরের শিশুসন্তান আরাধ্য বিশ্বাসসহ কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে গত বুধবার সকাল ৭টার দিকে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আটজনের। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত শিশু আরাধ্য বিশ্বাসকে (৮) উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে গতকাল শুক্রবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য