প্রচ্ছদ / ধর্ম ও জীবন / বিস্তারিত

তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন, বৃষ্টির জন্য যে দোয়া করবেন

১৫ এপ্রিল ২০২৪, ৮:৫১:৩৬

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাসহ দেশের পাঁচ বিভাগ এবং দুই জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এরই মধ্যে ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে তাপমাত্রা। এমন অবস্থায় বৃষ্টি নেমে এলে মিলবে স্বস্তি। প্রশান্তি ও রহমতের বারিবর্ষণে সিক্ত হবে ওষ্ঠাগত প্রাণ। তবে কখনো কখনো বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি কিংবা অতিবৃষ্টির আজাব নেমে আসে মানব সমাজে।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় প্রকাশ পায়। ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা আর-রূম: ৪১)।

কুরআনে আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য হতে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়। ’ (সুরা রুম, আয়াত: ৩৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি কি দেখ না, আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে, তারপর তা একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বারিধারা। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৪৩)।

রোদ-বৃষ্টি দুইটিই আল্লাহর দান। আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত। কৃষি কাজ ও শস্য ফলানোসহ মানবজীবনের অনেক ক্ষেত্রে বৃষ্টি যেমন প্রয়োজন, রোদ-গরমও তেমন জরুরি। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে কোনোটার মাত্রা কম-বেশি হয়। মানুষের আমল ও কর্মের কারণে প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসে বলে কোরআন-হাদিসে এসেছে।

তীব্র তাপপ্রবাহে বৃষ্টি না হলে, বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় মানুষজন অসুবিধা ও কষ্টে ভোগেন। তখন প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে বৃষ্টি কামনা করে দোয়া করা সুন্নত। আরবিতে এটাকে ‘ইসতিসকা’ বা ‘সিক্তকরণের দোয়া’ বলা হয়। আর বৃষ্টি প্রার্থনায় সম্মিলিতভাবে জামাতে দুই রাকাত নামাজও আদায় করা হয়। এটাকে বলা হয় ‘সালাতুল ইসতিসকা’। ইমাম সাহেব কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে রহমতের বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। মুসল্লিরাও তখন কায়মনোবাক্যে দোয়া-প্রার্থনা করেন। বস্তুত পাপমোচনের জন্য আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ অন্তরে তওবা-ইস্তেগফার করতে হয়। কেউ অন্যের হক বা মানবাধিকার নষ্ট করলে, তা ফেরত দিয়ে দোয়া করতে হয়। তবেই আল্লাহ তাআলা মানুষের মনোকামনা পূরণ করেন এবং বৃষ্টি দিয়ে নিসর্গ সিক্ত করেন।

বৃষ্টির জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছিলেন। হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন একদিন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কতিপয় লোক (বৃষ্টি না হওয়ায়) ক্রন্দনরত অবস্থায় এলে তিনি দোয়া করলেন-

اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا مَرِيعاً نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ ‏

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাসক্বিনা গাইছান মুগিছান মারিয়ান মারিআন নাফিআন গাইরা দাররিন আঝেলান গাইরা আঝেলিন।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে বিলম্বে নয় বরং তাড়াতাড়ি ক্ষতিমুক্ত-কল্যাণময়, তৃপ্তিদায়ক, সজীবতা দানকারী, মুষল ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করো।’

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তাদের উপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায় (এবং বৃষ্টি হয়)।’ (আবু দাউদ ১১৬৯, ইবনু খুযাইমা ১৪১৬, মেশকাত ১৫০৭)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক বেদুইন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমি অবশ্যই এমন এক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আপনার কাছে উপস্থিত হয়েছি যাদের রাখালদের পর্যাপ্ত আহারের সংস্থান নেই, এমনকি তারা তাদের চতুস্পদ জন্তুর বেঁচে থাকার আশাও ত্যাগ করেছে। তিনি (নবিজি) নামাজ পড়লেন এরপর মিম্বারে উঠে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন, এরপর দোয়া করলেন-

اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا طَبَقًا مَرِيعًا غَدَقًا عَاجِلاً غَيْرَ رَائِثٍ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাসক্বিনা গাইছান মুগিছান মারিয়ান ত্ববাকান মারআন গাদাক্বান আঝেলান গাইরা রায়িছিন।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের সাহায্যকারী বৃষ্টির পানি দান করুন যা সুপেয়, পর্যাপ্ত, ফসল উৎপাদক, প্রচুর, অবলম্বনে, বিলম্বে নয়।’

এরপর তিনি মিম্বার থেকে নামলেন। এরপর যেসব লোকই তার কাছে এসেছে তারাই বলেছে, আমাদের এখানে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ ১২৭০)

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য