ঈদের ছুটিতে বন্ধ মাদ্রাসা, আগুনে ছাই শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ট্রাঙ্ক

ঈদুল ফিতরের ছুটি চলছে। সে কারণে ছুটিতে গেছে রাজধানীর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ঝাউচর মোড়ের জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিম খানার অধিকাংশ শিশু শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ঝাউচর মোড় এলাকার একটি টিনশেড বস্তিতে বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ওই আগুনে শুধু বস্তির ঘরই পোড়েনি, পুড়েছে মাদ্রাসার দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর বই-খাতা, ট্রাঙ্ক ও চাল-ডাল।
ঈদের ছুটিতে যাওয়ার সময় নিজেদের প্রয়োজনীয় বইসহ মালামাল রেখে গিয়েছিল শিশু শিক্ষার্থীরা। ছুটি শেষে ফিরে হয়ত দগ্ধ ট্রাঙ্ক ছাড়া কিছুই পাবে না তারা।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, শুক্রবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আগুনের খবর আসে। এরপর একে একে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট। মাত্র ৫০ মিনিটের আগুনে টিনশেড বস্তিটির একাংশ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ অন্তত ১৫টি দোকান পুড়েছে। যার বেশির ভাগই বন্ধ ছিল। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও রক্ষা হয়নি কিছুই।
ঝাউচর এলাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী হাসান মোল্লা। টিন-বাঁশের তৈরি দোকানে গুছিয়ে রেখেছিলেন নানা ধরনের ভাঙ্গারি। উদ্দেশ্য ছিল ঈদের পর বিক্রি করবেন। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় দিনেই সব পুড়ে ছাই হলো। চোখের সামনে ব্যবসার পুঁজি পুড়তে দেখে আহাজারি করেছিলেন হাসান ও তার পরিবারের সদস্যরা।
ঝাউচর মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাজারীবাগ এলাকার বেড়িবাঁধ লাগোয়া প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিম খানা। সেখানে একইসঙ্গে অবস্থান সামছুস হুদা জামে মসজিদের। আগুনের কারণে মাদ্রাসার সব পুড়ে ছাই হয়েছে। ভেতরে থরে থরে সাজানো পুড়ে যাওয়া মাদ্রাসা ছাত্রদের ট্রাঙ্ক। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুড়ে যাওয়া কাপড়, বিছানা ও কোরআনসহ বিভিন্ন বই-খাতা। স্থানীয়রা এসব ট্রাঙ্ক সরাতে সহযোগিতা করছেন।
মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসার শিক্ষক ফরিদ আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটিতে মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। শুক্রবার হওয়ায় আমরা জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ পাশের একটি পলিথিন ও কার্টনের গোডাউনে আগুন লাগে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যাওয়ায় মাদ্রাসার সবকিছু পুড়ে গেছে।
তিনি বলেন, মাদ্রাসায় ২৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী ছিল। তারা ঈদের ছুটিতে চলে গেলেও তাদের ট্রাঙ্ক, কাপড় ও বিছানাপত্র মাদ্রাসায় ছিল। ছাত্রদের রেখে যাওয়া কোরআন, হাদিসসহ অনেক বই ছিল। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা চাল-ডালসহ সবকিছুই পুড়ে গেছে। রান্না চলছিল কি না জানতে চাইলে ফরিদ আহমেদ বলেন, মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় কয়েকদিন ধরে রান্নাও হচ্ছিল না। মাদ্রাসায় কেউ নেই, কার জন্য রান্না হবে।
যদিও পাশের দোকানি ও বাসিন্দাদের দাবি, মাদ্রাসার ভেতর থেকে আগুনের সূত্রপাত। এখন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পলিথিনের গোডাউনকে দোষ দিচ্ছে। ৫০ মিনিটের আগুনে পথে বসে গেছেন ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী হাসান মোল্লা। তিনি বলেন, দোকানে ভাঙ্গারি, কার্টুন, পলিথিনসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সবকিছু পুড়ে শেষ। আমার সব শেষ। আমি পথে বসে গেছি।
আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোন-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হাজারীবাগের ঝাউচরে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ভাঙ্গারির দোকানে আগুন লাগে। হাজারীবাগ ফায়ার স্টেশনসহ আশপাশের সাতটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতার কারণে আশপাশে আগুন ছড়াতে পারেনি। তবে কী কারণে আগুন লেগেছে ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কেমন তা আগুন নেভানোর পর জানানো যাবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
কী ধরনের স্থাপনা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে প্লাস্টিকের ভাঙ্গারি দোকান ছিল। প্রচুর কাগজ ছিল। যার ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর এখানে পানির স্বল্পতা ছিল, দূরে থেকে পানি আনতে হয়েছে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টায় আগুন ছড়িয়ে যেতে পারেনি।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
Office: Airport haji camp
Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com
Developed by RL IT BD
মন্তব্য