

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধানের গোলা

আল-আমিন হোসেন পরশ: কিছু কিছু ঐতিহ্য আছে যা বাঙালি, বাংলার সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এমনই কিছু ঐতিহ্য যা আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে। চলছে আমন ধান ঘরে তোলার মহা উৎসব।অনেক গ্রামে ধান কাটা, ঝাড়ার হিড়িক পড়ে গেছে যার কারনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকেরা ।
অতীতে যদি আমরা ফিরে যায় তাহলে ধান কাটার আগেই কৃষক, কৃশানীরা আরো একটি কাজে ব্যস্ত হয়ে যেত সেটি হল ধানের গোলা রক্ষণাবেক্ষণ। সে গোলা এখন বিলুপ্তির পথে যদিও দু এক জায়গায় দেখা যায় সেটিও স্থান পেয়েছে ঝড় অথবা বাঁশ বাগানে। অতীতে অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে ধান মজুদ রাখার জন্য বাঁশ, বেত ও কাদা দিয়ে তৈরি করা হতো গোলাঘর। এর পর তার গায়ে ভিতরে ও বাহিরে বেশ পুরু করে মাটির আস্তরণ লাগানো হত। চোরের ভয়ে এর মুখ বা প্রবেশ পথ রাখা হত বেশ উপরে এবং ছোট্ট।
এই গোলা ছিল কৃষক পরিবারের ঐতিহ্য। দিন যতই যাচ্ছে, ততই মানুষের জীবনে প্রবেশ করছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আগেকার দিনে গোয়ালভরা গরু, গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ, গৃহস্থের কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।
সময়ের বিবর্তনে মানসিকতার পরিবর্তনে গোলার ধান এখন স্থান পাচ্ছে আধুনিক গুদামঘর বা গোডাউনে । এর আবার অন্যতম কারণ হতে পারে আবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ কমে যাওয়া, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ।
গ্রাম অঞ্চলে এক সময়ে সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করত কার কতটুকু জমি আছে, ধানের গোলা কয়টি আছে । শুধু তাই নয় বিয়ে দেয়ার সময় কন্যা ও বর পক্ষের উভয়ই বাড়ি ধানের গোলার খবর নিতো । যা এখন শুধুই ইতিহাস । গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন তারা কাজ না থাকায় ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছে।
এ নিয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি গ্রামে ইউনুস আলী মন্ডল এর সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, এমন একটা সময় ছিল ধানের গোলা দেখেই অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হতো। যেমন আমার বিয়ে হয়েছে গোলা দেখে ও পুকুর দেখে। কারণ সেই সময়ে মানুষ মনে করত গোলা এবং পুকুর থাকলেই ধান, মাছ, এবং গোসল করতে পারবে। সেজন্যই বলা হত মাছে ভাতে বাঙ্গালি। আমার বাড়িতে এখনো দুইটি গোলা রক্ষণাবেক্ষণ করে রেখে দিয়েছে। আগে ভাবা হতো যার গোলা নাই তা জমি নাই। কিন্তু সময়ের সাথে যুগে যেমন পরিবর্তন এসেছে সেই সাথে বসবাস করার জায়গারও সংকট দেখা দিয়েছে। একটি জায়গায় গোলা থাকলে শুধু ধান রাখা যেত আর এখন সেই স্থানে গুদামঘর বা গোডাউন করলে ধানের পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসপত্র রাখা যায়।
নতুন প্রজন্মের কাছে গোলাঘর একটি স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে।হয়তো এমন একটি দিন আসবে যেদিন গোলা জাদুঘরে স্থান পাবে সেদিন আর বেশি দূরে নয় ।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
Office: Airport haji camp
Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com
Developed by RL IT BD
মন্তব্য