এবার নিউইয়র্কে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু, মামদানির নির্দেশে সেখানে কী গ্রেপ্তার হতে পারেন

৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০২:৫৪

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে পা রাখলে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেবেন-এমন ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন নিউইয়র্কের মেয়র জোহরান মামদানি। হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসির জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে এই হুঁশিয়ারি এসেছে, যা আন্তর্জাতিক আইন, কূটনৈতিক দায়মুক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল–অঙ্গরাজ্যের ক্ষমতার সংবিধানিক সীমা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। খবর মিডল ইস্ট মনিটরের।

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা এবং দুর্ভিক্ষকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়। তবে জটিলতা তৈরি হয়েছে এখানেই যে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র-কোনো দেশই আইসিসির মূল চুক্তি রোম স্ট্যাটিউটের (সংবিধি) সদস্য নয়। ফলে আইসিসির রায় কার্যকর করার আইনগত বাধ্যবাধকতা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সরাসরি প্রযোজ্য নয়, বরং বিষয়টি অনেকাংশেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।

আন্তর্জাতিক আইনে আইসিসির বিকল্প হিসেবে ‘সার্বজনীন বিচারিক ক্ষমতা’ বা ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশনের নীতি রয়েছে, যার মাধ্যমে যেকোনো রাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও বিচার করতে পারে, সেই অপরাধ যেখানেই সংঘটিত হোক না কেন।

এর আগেও এই নীতির প্রয়োগ দেখা গেছে। ১৯৯৮ সালে চিলির সাবেক শাসক অগুস্তো পিনোশেকে লন্ডনে গ্রেপ্তার করা হয় স্পেনের আদালতের জারি করা পরোয়ানার ভিত্তিতে। ১৯৬০ সালে নাৎসি কর্মকর্তা অ্যাডলফ আইখমানকে আর্জেন্টিনা থেকে ধরে এনে ইসরায়েলে বিচার করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সুইজারল্যান্ডে গাম্বিয়ার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওসমান সোনকোকেও একই নীতির ভিত্তিতে দণ্ড দেয়া হয়।তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তবতা ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধমূলক আইনের প্রয়োগ সাধারণত ফেডারেল সরকারের অধিকারভুক্ত। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ (এনওয়াইপিডি) এককভাবে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানকে গ্রেপ্তার করতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রবল আইনি সন্দেহ রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও ফেডারেল কর্তৃপক্ষের সরাসরি অনুমোদন প্রয়োজন হবে, যা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব।

তারপরও মামদানির বক্তব্য প্রতীকী গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এটি আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, যুদ্ধাপরাধের দায়মুক্তির সংস্কৃতি ভাঙা এবং আইসিসির ভূমিকা জোরদার করার একটি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেই বেশি দেখা হচ্ছে।

এই বিতর্কের মধ্যেই বুধবার (৩ ডিসেম্বর) নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি নিউইয়র্ক সফরের পরিকল্পনা বাতিল করছেন না। ফলে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে-যদি তিনি সত্যিই নিউইয়র্কে আসেন, তাহলে তা কি কেবল রাজনৈতিক নাটকই থাকবে, নাকি তা আন্তর্জাতিক আইনের ইতিহাসে নতুন কোনো অধ্যায়ের জন্ম দেবে?

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য