ভারতে নতুন ‘বাবরি মসজিদের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বাজেট ৩০০ কোটি

৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৩:৫৯

ছবি: সংগৃহীত

বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভারতে নতুন করে বাবরি মসজিদ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। তবে এবার উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় নয়, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গা ও রেজিনগরের মাঝে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বাবরি মসজিদের আদলে নতুন মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজ্যটির ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবির। সকাল ১০টা থেকে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরে বেলা ১২টায় হয় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মূল অনুষ্ঠান।

মুর্শিদাবাদে হুমায়ুন কবীরের বাবরি মসজিদের শিলান্যাস করতে সৌদি আরব থেকে এসেছিলেন হজরত মাওলানা মুফতি সুফিয়ান। মদিনা থেকে এসেছেন আরেকজন ধর্মীয় নেতা শেখ আবদুল্লাহ। এর পাশাপাশি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে হাজার হাজার মুসল্লিকে যে যার সাধ্যমতো ইট মাথায় নিয়ে সভাস্থলে আসতে দেখা যায়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে দান অর্থাৎ ইমারতি খয়রাত হিসেবে এই ইট এনেছেন তারা। সভাস্থলেই প্রায় কয়েক কোটি টাকা মসজিদ নির্মাণের খরচ হিসেবে দান করেন মুসল্লিরা। এক ডাক্তার নিজেই দেন এক কোটি রুপি।

অবশ্য হুমায়ুনের মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী বলে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এ ক্ষেত্রে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না-হয়, তা পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

শনিবার উদ্বোধন হলেও আদালতের নির্দেশ মেনে একপ্রকার শুক্রবার সকাল থেকেই বেলডাঙ্গা ও আশপাশের অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করা হয়। এলাকায় মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী, র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স, বিএসএফসহ ৩ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী।

বরখাস্ত হওয়া তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ুন কবির শনিবার এই মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি বলেন, একটি ইটও কেউ সরাতে পারবে না, কারণ বাংলার ৩৭ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা যেকোনও মূল্যে এটি তৈরি করবে। তিনি বলেন বাবরি মসজিদ তৈরি হবে। তিনি উপাসনালয় নির্মাণের সাংবিধানিক অধিকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি অসাংবিধানিক কিছু করছেন না, কেউ মন্দির বা গির্জা তৈরি করতে পারলে, আমিও পারব।

সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় কবির বলেন, আমি অসাংবিধানিক কিছু করছি না। কেউ যদি মন্দির বানাতে পারে, কেউ যদি গির্জা বানাতে পারে; তাহলে আমিও মসজিদ বানাতে পারবো। বলা হচ্ছে যে আমরা বাবরি মসজিদ বানাতে পারব না। এটা কোথাও লেখা নেই। সংবিধান আমাদের মসজিদ তৈরি করার অনুমতি দেয়।

তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে, কিন্তু যার সঙ্গে আল্লাহ আছেন তাকে কেউ থামাতে পারবে না। আদালতও স্পষ্টভাবে বলেছে যে, ভারতের সংবিধানে লেখা আছে- কেউ চাইলে মসজিদ তৈরি করতে পারে; এটি তার অধিকার।

১৯৯২ সালে উগ্রপন্থিরা কয়েক শতাব্দী পুরোনো বাবরি মসজিদটি ভেঙে ফেলে। সেই ঘটনাকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ৩৩ বছর আগে মুসলিমদের মনে যে আঘাত লেগেছিল আজ সেই ক্ষতে সামান্য একটা প্রলেপ লাগলো। এক শ্রেণির মানুষ এটা হতে দিতে চায়নি। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আমাকে হুমকি দিয়েছে, বলা হয়েছে, বাবরি মসজিদ করলে আমার মাথার দাম ১ কোটি টাকা হবে!’

এদিন অনুষ্ঠানস্থল থেকে দেয়া ভাষণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে হুমায়ুন করির বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যা করবেন, সেটাই ঠিক। বাকিরা যা বলবে সেটা ভুল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এত অহঙ্কার। মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী করে কী পেয়েছে সংখ্যালঘুরা?’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলায় ৩৭ শতাংশ সংখ্যালঘু আছে। তাদের সিংহভাগের ভোট পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা। খুব অহঙ্কার হয়েছে। চূর্ণ করব আমি। আমি তাকে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী করবই’। তিনি অভিযোগ করেন, ধাপে ধাপে তৃণমূল সংখ্যালঘু বিধায়কের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে। ২০১১ সালে যে সংখ্যাটা ছিল ৬৭ জন, ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭ জনে। ২০২১ সালে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪ জনে।

ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানের পর হুমায়ুন কবির বলেন, মসজিদ নির্মাণে টাকার অভাব হবে না। তার দাবি, মসজিদের জন্য ৩০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, ২৫ বিঘা জমিতে মসজিদ চত্বরে নির্মাণ হবে কলেজ ও হাসপাতাল। মূল মসজিদ নির্মাণ হবে তিনকাটা জমির উপর। সেখানে একটি হাসপাতাল, গেস্টহাউস এবং সভাকক্ষও থাকবে।

তিনি এই প্রকল্পের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এটি মুসলমানদের প্রতিশ্রুতি: বাবরি মসজিদ তৈরি হবেই, হবেই, হবেই। তিনি জানিয়েছেন, মসজিদ নির্মাণের জন্য এক শিল্পপতি ৮০ কোটি টাকা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ২২ ডিসেম্বর নতুন দলের ঘোষণা করবেন তিনি। সেই দিন আরও নতুন তথ্য দেবেন তিনি।

এদিকে মুশিদাবাদে মসজিদ নির্মাণে বিরোধিতার কোনো কারণ দেখছেন না ভারত সেবাশ্রমের সন্ন্যাসী পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত কার্তিক মহারাজ। তিনি বলেন, হুমায়ুনের সঙ্গে যতটা তৃণমূলের সম্পর্ক, তার কিছুটা সম্পর্ক বিজেপির সঙ্গেও রয়েছে। তার কথায়, ‘উনি তৃণমূলে ছিলেন। বিজেপিতেও এসেছিলেন। মানুষ হিসাবে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।’

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য