ভারতীয় আধিপত্য প্রতিবেশী দেশগুলোকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে

৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:৫৫:৫৫

এবার ভারত নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নিরাপত্তা প্রদানকারী এবং একটি সমৃদ্ধ-স্থিতিশীল প্রতিবেশীর স্বাভাবিক নেতা হিসেবে বিবেচনা করতে চায়। কিন্তু বঙ্গোপসাগর থেকে হিমালয় পর্যন্ত – ভারতের হস্তক্ষেপ এবং নীতিগুলো ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে। ভারতের কঠোর কৌশল – একতরফাভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা থেকে শুরু করে নেপালের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ – ছোট দেশগুলোতে অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছে। ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তার সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ বাংলাদেশে দৃশ্যমান।

কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের ‘নিকটতম অংশীদারিত্ব’ উপভোগ করেছে। নয়াদিল্লির নেতারা গর্বের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের ‘ঘনিষ্ঠতম অংশীদারিত্ব’ বলে অভিহিত করেছেন। ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছিল, যখন দেশটি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পৃথক হয়েছিল। তারা আওয়ামী লীগ দলকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করেছিল এবং ঢাকার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক নীতির ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।

২০২৪ সালে সাবধানে নির্মিত সেই কৌশলগত রাজধানী ভেঙে পড়ে, যখন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিগ্রস্ত ও নৃশংস রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণবিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত হন। তাকে ব্যাপকভাবে এই অঞ্চলে ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে দেখা হতো। এরপর জনগণের অধিকারের দাবিতে পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে নয়াদিল্লি বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করে দেয়, নিয়মিত কূটনীতি ধীর করে দেয় এবং হাসিনাকে আশ্রয় দেয়- যাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. নাজমুস সাকিব টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, ‘বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে স্পষ্টতই কর্তৃত্ববাদকে সক্ষম করে তুলেছিল ভারত।’ তার মতে, এর ফলে বাংলাদেশে জনমত ক্রমশ ভারতের বিরুদ্ধে ঝুঁকে পড়ছে। সাকিব বলেন, ‘এখন যেহেতু ভারত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দণ্ডিত একজন পলাতক আসামিকে আশ্রয় দিচ্ছে, তাই দ্বিপাক্ষিক প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে তাদের স্পষ্ট বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতকে হাসিনাকে হস্তান্তরের অনুরোধ করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের গণবিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নাজমুস সাকিব উল্লেখ করেছেন, অতীতে বাংলাদেশ নিজেই ভারতের সংবেদনশীল অনুরোধগুলোকে সম্মান জানিয়েছিল – যার মধ্যে রয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে সক্রিয় সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করা।

২০১৫ সালে তাকে প্রত্যর্পণের ঢাকার সিদ্ধান্তকে একটি বড় শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে দেখা হয়েছিল। কিন্তু সাকিব বলেন, হাসিনাকে হস্তান্তর করে এখন ভারতের প্রতিদান দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তিনি উল্লেখ করেন, ‘যদি ভারত তার চুক্তির বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটি ইঙ্গিত দেবে যে, ভারত একটি অবিশ্বস্ত মিত্র।’ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এর ভারতের সুনামের ক্ষতি হবে উল্লেখযোগ্য। ‘বর্তমান এবং সম্ভাব্য অংশীদাররা এই আচরণ পর্যবেক্ষণ করবে এবং সেই অনুযায়ী তাদের প্রত্যাশা সামঞ্জস্য করবে।’

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য