প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

ভাবির সঙ্গে শেষ কথায় কালাম বলেছিলেন, ‘ইলিশ মাছ কিনে রেখো’

২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৭:৫৮

ছবি: সংগৃহীত

দুপুরে শেষবার ভাবির সঙ্গে কথা বলেছিলেন আবুল কালাম আজাদের। সেই সময় বলেন, ‘দু’এক দিনের মধ্যেই বাড়ি আসবো, ইলিশ মাছ কিনে রেখো। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই তার দুর্ঘটনার খবর পৌঁছায় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে।

রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে ভারী ধাতব যন্ত্রাংশ (বিয়ারিং প্যাড) নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ (৩৫) নামে ওই তরুণ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয় রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে। ঘটনাস্থল ছিল কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটের সামনে।

নিহত আবুল কালাম আজাদ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল চোকদারের ছেলে। তিনি বর্তমানে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানতলি এলাকায় বসবাস করতেন। তার মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক।

নিহতের পারিবার সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে আবুল কালাম ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন। নিয়মিত ব্যবসায়িক কাজে ফার্মগেট এলাকায় যাতায়াত ছিল তার।

নিহতের মেঝ ভাবি আছমা বেগম বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে কালামের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল। বলেছিল, দু’এক দিনের মধ্যে বাড়ি আসবো, তুমি ইলিশ মাছ কিনে রেখো। কিন্তু ভাই আর বাড়ি ফিরল না।’

চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া চোকদার জানান, ‘কালাম খুব ভদ্র ও পরিশ্রমী মানুষ ছিলো। নিজের চেষ্টায় ঢাকায় ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিল। এমন দুর্ঘটনা সরকারের অবহেলার কারণেই ঘটেছে। এখন ওর সংসার কীভাবে চলবে?’

নিহতের পরিবার আরও জানায়, আবুল কালামের ৫ বছরের এক ছেলে সন্তান আব্দুল্লাহ ও ৩ বছরের কন্যা সুরাইয়া আক্তার রয়েছে। তার মৃত্যুর পর পরিবারটি এখন নিঃস্ব অবস্থায় পড়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হঠাৎ করেই মেট্রোরেল পিলারের ওপর থেকে ভারী ধাতব (বিয়ারিং প্যাডটি) নিচে পড়ে যায়। সেটি কালামের মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সড়ক ও রেলপথ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, নিহতের পরিবারের প্রতি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এছাড়া পরিবারের কর্মক্ষম কাউকে মেট্রোরেলে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবারটিকে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা দেয়া হবে।

নিহতের প্রতিবেশীরা বলছেন, কালাম ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী ছিল। পরিবারের হাল ধরেছিল সে-ই। এখন তার শিশুসন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে? শেষ ফোনে বলেছিলেন, ইলিশ মাছ কিনে রেখো ভাবি। তারপরই চিরতরে নীরব হয়ে গেলেন শরীয়তপুরের তরুণ ব্যবসায়ী আবুল কালাম।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য

Ad