আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ১৫ সেনা কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করেছেন: আসামিপক্ষের আইনজীবী

ছবি: সংগৃহীত
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ১৫ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর এক ব্রিফিংয়ে এমনটা জানান তিনি।
আসামিপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, আমরা ওকালতনামা সাবমিট করেছি। সেই সঙ্গে আবেদনগুলোও জমা দিয়েছি। এ বিষয়ে পরবর্তী দিনে শুনানি হবে। এই ১৫ জন অনেক সিনিয়র অফিসার। আন্তর্জাতিক বাহিনীতেও অনেকে চাকরি করেছে। তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই আজকে এই আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।
ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, যারা সত্যিকারে অপরাধ সংঘটিত করেছে, তারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছে। এই অফিসাররা নির্দোষ, তারা আদালতের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নির্দোষ প্রমাণিত হবে বলে আমরা আশা করি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু তারা (১৫ সেনা কর্মকর্তা) পুলিশের মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে, সেটিকে প্রসিকিউশন গ্রেপ্তার বলেছেন। কিন্তু তারা কখনোই গ্রেপ্তার ছিলেন না। ইতোপূর্বে সেনা সদর একটি প্রেস ব্রিফিং করেছিল, সেখানে তারা বলেছিলেন- ওই ১৫ কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে রয়েছে। সেনাবাহিনীর আইন অনুযায়ী তারা অ্যাটাচড্ ছিল এবং তারা শুরু থেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই আজ তারা ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেছে। তারা ট্রায়েল ফেইস করতে চায়, তারা এই অপরাধ সংঘটিত করেনি।
আসামিপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, সাবেক আইজিপি রাজসাক্ষী হয়ে বলেছেন- যা কিছু হয়েছে, তা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। এখানে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এই ১৫ সেনা কর্মকর্তার এই ঘটনার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তারপরও যেহেতু তাদের নাম এসেছে, তাদের নামে চার্জ দাখিল করা হয়েছে, তাই তারা তাদের ডিফেন্স পয়েন্ট দিয়ে এই ট্রায়েল ফেইস করতে চায়।
১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কোন কারাগারে পাঠানো হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসে একটি ভবনটিকে সাবজেল ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের সেখানে নেয়া হবে বলে আমরা জেনেছি।
এর আগে বুধবার গুমের ঘটনায় দু’টি ও একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে পলাতক শেখ হাসিনা, তারেক সিদ্দিকীসহ বাকিদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের বাকিরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
কারাগারে পাঠানো সেনা কর্মকর্তারা হলেন- র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (এখন অবসরকালীন ছুটিতে)।
এছাড়াও কারাগারে যাওয়া অপর সেনা কর্মকর্তারা হলেন- র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিন পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য