ইফতার করতে বাসায় যাচ্ছিল আমার ভাই, পথিমধ্যে আগুনে দগ্ধ

আমার ভাই গাজীপুর কোনাবাড়ীতে একটি প্রিন্ট কারখানায় কাজ করে। গতকাল বিকেলে কারখানা থেকে বের হয়ে ইফতারের জন্য বাসায় যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজের আগুনে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মাত্র ১৮ দিন আগে তার একটা ছেলে সন্তান হয়েছে। আমার ভাই বাসায় ইফতার করতে যাচ্ছিল, সে তো ভাবেনি যে তার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন আব্দুল কাদির (২৫)।
আব্দুল কাদিরের ছোট ভাই ইয়াসিন আরাফাত (২১) গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজের আগুনে গুরুতর দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট ভর্তি রয়েছেন।
আব্দুল কাদির বলেন, কোনাবাড়ীতে একটি প্রিন্ট কারখানায় আমার ভাই কাজ করে। আমার ভাইয়ের বাসাও কোনাবাড়ীতে। গতকাল ইফতারে ২৫ মিনিট আগে সে বাসায় যাচ্ছিল। রাস্তায় দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে আগুনে আমার ভাইয়ের শরীর পুড়ে যায়। আমার ভাইয়ের শরীরের ৮৫ শতাংশ অংশ পুড়ে গেছে।
এ সময় কান্নাবিজরিত কণ্ঠে আব্দুল কাদির বলেন, মাত্র ১৮ দিন আগে আমার ভাইয়ের ছেলে সন্তান হয়েছে। আর এখন আমার ভাই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমার ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজের ঘটনায় দগ্ধ হয় তাহিদুল (৫) ও তাহিদা (৩)। তারা দুই ভাই বোন। ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের বাড়ি। ঘটনার সময় গ্যাস সিলিন্ডার দেখতে গিয়ে বিস্ফোরণে তারা আহত হয়।
এ বিষয়ে তাদের নানা আব্দুল মোতালেব বলেন, আমার নাতি ও নাতনির বাসা ঘটনাস্থলের পাশেই। গতকাল যখন গ্যাস সিলিন্ডারটিতে গ্যাস লিকেজ হয়েছিল, তখন সেটিকে বাহিরে ফেলে দেওয়া হয়। আর তখনই পাশে দুই নারী মাটির চুলায় রান্না করছিল। লিকেজ হওয়ার গ্যাস সিলিন্ডার দেখতে যায় তাহিদুল ও তাহিদা। এর মধ্যে চারদিকে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। আর মাটির চুলার আগুন থেকে গ্যাসে আগুন ধরে যায়। তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাহিদুল ও তাহিদার শরীর সেই আগুন পুড়ে যায়।
তিনি বলেন, ডাক্তাররা বলেছেন তাহিদুলের শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে এবং তাহিদার ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এখন আল্লাহ সহায়, আল্লাহ যদি তাদের বাঁচিয়ে দেয়।
ইফতার করতে বাসায় যাচ্ছিলেন গার্মেন্টস কর্মী আজিজুল হকও। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে লাগা আগুনে তিনিও আহত হয়েছেন। আজিজুল বর্তমানে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি রয়েছেন।
তার ভাই মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গাজীপুরে একটি গার্মেন্টসে কাজ করে আজিজুল। গতকাল বিকেলে ইফতারের জন্য কোনাবাড়ীর বাসায় যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে গ্যাসের আগুনে তার দুই পা পুড়ে গেছে। ঘটনার পাঁচ মিনিট পর আমিও ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ঘটনাস্থলে দেখি মানুষের চিৎকার ও দৌড়াদৌড়ি। প্রথমে ভেবেছিলাম রাস্তায় দুর্ঘটনা হয়েছে। পরে দেখি রাস্তায় অনেক মানুষ পড়ে আছে, আর শরীর পুড়ে গেছে। এরপর যে যার মতো করে আহতদের উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৩ মার্চ) বিকেলে কোনাবাড়ীতে একটি বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে ৩২ জন দগ্ধ হন। পরে তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ৮-১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
Office: Airport haji camp
Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com
Developed by RL IT BD
মন্তব্য