‘মৃত্যুর আগে যেন আমরা ভিসা পাই’
ছবি: সংগৃহীত
গাজার দেইর আল-বালাহ অঞ্চলে ১ মার্চ ভোররাতে মারিয়াম সাব্বাহ তাঁর ভাইবোনদের সঙ্গে কম্বলের নিচে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র তাদের বাড়িতে আঘাত হানে। প্রথমবার বেঁচে গেলেও ৯ বছরের আতঙ্কিত মারিয়াম বাবা-মায়ের দিকে দৌড় দিলে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের
মারিয়ামের মা ফাতমা সালমান বলেন, ‘আমি দেখছিলাম, ও আমার দিকে আসছে। হঠাৎ আরেকটা বিস্ফোরণ হলো, আর ধোঁয়ার ভেতরে সে হারিয়ে গেল।’ পরে সন্তানদের খুঁজতে গিয়ে তারা মারিয়ামকে রক্তে ভেজা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তার বাঁ হাত ছিঁড়ে গেছে, শরীর ভেদ করে গেছে শেল ও গুলি, পেট থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। হাত হারানোর পাশাপাশি বিস্ফোরণে তার পেট ও কোমরে গুরুতর আঘাত লাগে। শেলবিদ্ধ হয়ে ব্লাডার, জরায়ু আর অন্ত্র ছিঁড়ে যায়।
গাজার আল-আকসা হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে মারিয়ামকে চিকিৎসা দিয়েছেন ব্রিটিশ সার্জন ড. মোহাম্মদ তাহির। তিনি বলেন, মারিয়ামের মতো আহত শিশুদের জন্য বিশেষ ধরনের পুনর্গঠনমূলক অস্ত্রোপচার দরকার। এ ছাড়া তার পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব নয়।’
মারিয়াম গাজার সেই হাজারো মানুষের একজন, যারা গত ২৩ মাসে ইসরায়েলের বর্বর হামলায় আহত বা বিকলাঙ্গ হয়েছে।
গাজায় ধারাবাহিক বিমান হামলা, হাসপাতালের ওপর আক্রমণ এবং খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় স্বাস্থ্য খাত ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসকরা গুরুতর আহত, অসুস্থ ও ক্ষুধার্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার মতো সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত সাত হাজার ৬৭২ জন রোগীকে (এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৩৩২ শিশু) জরুরি চিকিৎসার জন্য গাজা থেকে বাইরে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের মেডিকেল অনুমোদন অত্যন্ত ধীর, জটিল ও কঠোরভাবে যাচাই করা প্রক্রিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সাত শতাধিক রোগী ইসরায়েলের অনুমতি না পেয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। তাদের অনেকেই শিশু ছিল।
মারিয়ামের পরিবারও একই দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল তার অস্ত্রোপচারের প্রস্তাব দিলেও, অনুমতির অপেক্ষায় দুই মাসে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। পরে তাকে মিসরে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও মার্কিন ভিসার অপেক্ষায় তাদের পড়ে থাকতে হচ্ছে।
একইভাবে মিসরে আটকে আছে ১৮ বছরের নাসের আল-নাজ্জার। জানুয়ারিতে গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় তার মুখ ও চোয়াল চূর্ণবিচূর্ণ হয় এবং চোখ ও নাক হারায়। এখন আয়নায় নিজেকে দেখতে পারে না সে। নাজ্জারের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এল পাসো হাসপাতালে ডাক্তাররা প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
এদিকে হাত হারিয়ে ও শরীরজুড়ে ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে ১০ বছরের আহমেদ দুয়াইক। ভিসা বাতিল হওয়ার খবর শোনার পর সে ভীষণ মানসিক চাপে ভুগছে।
দুয়াইকের মা ঈমান আল-খাতিব ক্লান্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা অসহায়। এখন শুধু প্রার্থনা করতে পারি, মৃত্যুর আগে যেন সন্তানের ভিসা আসে।’
কায়রোর মার্কিন দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের কয়েক দিন আগে হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসার ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ছিল ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কট্টর ডানপন্থি কর্মী লরা লুমারের অনলাইন প্রচারণা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেন, ‘কেন ইসলামী অনুপ্রবেশকারীদের ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে?।’
ডব্লিউএইচওর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র গাজা থেকে মাত্র ৪৮ জনকে চিকিৎসার জন্য ভিসা দিয়েছে। যেখানে মিসর তিন হাজার ৯৯৫ জনকে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এক হাজার ৪৫০ জনকে চিকিৎসার অনুমোদন দিয়েছে। যুক্তরাজ্য নিয়েছে মাত্র ১৩ জনকে।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
Office: Airport haji camp
Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com
Developed by RL IT BD
মন্তব্য