প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

৫৬ টাকা ধার করে আবেদন, চাকরি পেলেন আবু তাহের

৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭:২০:০৫

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের ভাবরঙ্গী গ্রামের আবু তাহের মাত্র ৫৬ টাকা ধার করে চাকরির আবেদন করেছিলেন। অবশেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরি পেয়েছেন তিনি। আবু তাহের মৃত সমির উদ্দীনের ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ছোটবেলা থেকেই আর্থিক কষ্টের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে তাকে।

তাহের বলেন, আমার জীবন অনেক কষ্টের। আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তখন থেকেই মানুষের বাড়িতে কাজ করে পড়াশোনা শুরু করি। সেভাবে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করি।

তাহেরের পরিবার তখনও চেয়েছিল তিনি পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিক। কিন্তু নিজের ইচ্ছাশক্তি আর স্বপ্নের জোরে তিনি থেমে যাননি। এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করতে না পেরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার এক মাস আগে তার বাবা মারা যান।

তাহের বলেন, বাবার মৃত্যুর পর মা আমাকে সাহস দেন। তার অনুপ্রেরণায় আমি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করি। এরপর টিউশনি করে ইংরেজিতে অনার্স শেষ করি।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দেন। চাকরি পাওয়ার পর আবেগঘন কণ্ঠে তাহের বলেন, আমি জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই। বিনা টাকায় আমার চাকরি হলো। আমার মতো গরিব ঘরের ছেলের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না।

শুধু তাহের নন, তার মতো আরও অনেকে কষ্ট করে পড়াশোনা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন।

বোদা উপজেলার সাতখামার এলাকার আলামিন নিয়োগ পেয়েছেন নিরাপত্তা প্রহরীর পদে। তিনি বলেন, “আমি যখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ি, তখন বাবা মারা যান। ভালো চাকরি করার ইচ্ছা ছিল বলেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি করেছি। ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সার্কুলার হলে আবেদন করি। শুধু আবেদন খরচটাই দিতে হয়েছে, আর কোনো খরচ হয়নি।”

পঞ্চগড় চিনিকল কোলনীর খায়রুন নাহার বলেন, ২০০১ সালে আমার বাবা মারা যান। তখন থেকে খালা-খালু আমাকে দেখাশোনা করেন। টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে মাস্টার্স শেষ করেছি। একটা চাকরি আমার খুব প্রয়োজন ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, এখানে আমার অফিস সহায়ক চাকরির জন্য কোনো টাকা লাগেনি।

জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ১১টি পদে ৪ হাজার ৯৮৮ জন আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৩২২ জন। তাদের মধ্যে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন ৪৬ জন। গতকাল ৪৫ জন নতুন কর্মী যোগদান করেন।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। সবকিছুই সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। এখানে কারও প্রতি পক্ষপাত বা অবিচার করা হয়নি। আমরা যোগ্যতা, মেধা এবং কঠোর পরিশ্রমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। সেই কারণেই প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীরাই নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য