বুধবার ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ
 

বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেল সুপ্রিম কোর্ট

২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২:৪৬:৩৫
ফাইল ছবি

বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া তিন মাসের মধ্যে পৃথক সচিবালয় গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

এর ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ফিরল বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এ ছাড়া এ রায়ের ফলে সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় স্থাপনে কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এর আগে বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা এবং বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রশ্নে হাইকোর্টের রায় ঘোষণা শুরু হয়। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু হয়।

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারির উদ্দেশ্য সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ যথাযথভাবে পালনের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তগুলো সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথককরণকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আপিল বিভাগের ৭৯/১৯৯৯ নম্বর সিভিল আপিলের (ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার) রায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণের বাস্তবায়নকল্পে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়ার ৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একটি সচিবালয় থাকবে এবং এটা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় নামে অভিহিত হবে। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা দপ্তরের আওতাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে না। বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে একজন সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সমন্বয়ে এই সচিবালয় গঠিত হবে।’

এই সচিবালয়ের কার্যাবলি সম্পর্কে অধ্যাদেশের ৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘অন্য কোনো আইন, বিধি বা কার্যবণ্টনে যা কিছুই থাকুক না কেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যাবলি নিম্নরূপ হবে:-

(ক) দেশের বিচার প্রশাসন পরিচালনায় সুপ্রিম কোর্টকে সহায়তা প্রদান করার জন্য অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব সাচিবিক দায়িত্ব পালন; (খ) সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন সাপেক্ষে রাজস্ব আদালতগুলো ব্যতীত হাইকোর্ট বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন দেশের সব অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা, এখতিয়ার, ক্ষমতা ও গঠন নির্ধারণ; (গ) হাইকোর্ট বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সব আদালত বা ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি নির্ধারণ; ঘ) সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, শৃঙ্খলা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়; (ঙ) অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, শৃঙ্খলা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়; (চ) অধস্তন আদালত ও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের বাজেট ব্যবস্থাপনা; (ছ) অধস্তন আদালত এবং বিচারকদের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান; (জ) সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণ; (ঝ) অধস্তন আদালতের বিচারক ও সহায়ক কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ; (ঞ) বিচার সেবার মানোন্নয়ন ও বিচার বিভাগের সংস্কারে প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনা।

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যপদ্ধতির ব্যাপারে ৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সচিব সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হবেন। (২) সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের সচিব সরকারের সিনিয়র সচিবের সমমর্যাদা ও সুবিধাদি ভোগ করবেন।’

৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগীয় নীতিনির্ধারণ, কর্মকৌশল উদ্ভাবন এবং দেশের বিচার প্রশাসনকে অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতির সমন্বয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখপূর্বক বিচার প্রশাসন-সংক্রান্ত এক বা একাধিক কমিটি গঠন করতে পারবেন।’

মোট ১৮টি ধারা সংবলিত এই খসড়া অধ্যাদেশের ৯ নম্বর ধারায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের বাজেট প্রণয়ন এবং ১০ নম্বর ধারায় অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে বলা আছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের জন্য বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় অনুমোদনে প্রধান বিচারপতি চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবেন।’ ১১ নম্বর ধারায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে বলা আছে। ১২ নম্বর ধারায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির সাধারণ শর্তাবলি, ১৩ নম্বর ধারায় বেতন-ভাতা ও অন্য সুযোগ-সুবিধাদি, ১৪ নম্বর ধারায় শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা, ১৫ নম্বর ধারায় সচিবের প্রশাসনিক দায়িত্ব সম্পর্কে, ১৬ নম্বর ধারায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় ও অধস্তন আদালতের সাংগঠনিক কাঠামোর বিষয়ে বলা আছে।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

সর্বশেষ

Editor & Publisher: Md. Abdullah Al Mamun

Office: Airport haji camp

Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com

Developed by RL IT BD