মঙ্গলবার ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:০২ অপরাহ্ণ
 

ভারতে বসে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করলেন আ.লীগ নেতা হানিফ

২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:২৫:৩৫
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ আমলে নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে দেশের ১১৩তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়েছিলেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ। কুষ্টিয়া হাউজিং স্টেটের ৬ ও ৭ নম্বর প্লটের ঠিকানায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়; কিন্তু বাস্তবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। ক্ষমতার দাপটে স্ত্রী ফৌজিয়া আলমের নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির লাইসেন্স নিয়েছিলেন তিনি।

জানা গেছে, বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করেন ‘লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়’। শেষ পর্যন্ত অনুমোদন মিললেও বিশ্ববিদ্যালয়টি আর চালু করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ চলমান অবস্থায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশের আলোচিত নেতা হানিফ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে হানিফ কলকাতায় একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে রয়েছেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের পটপরিবর্তনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম। ভারতে বসেই বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন হানিফ। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে স্ত্রীর নাম বাদ দিয়ে তার অতি আস্থাভাজন আগের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্টনার হালিমুজ্জামানকে চেয়ারম্যান করেন। ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের সময় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন মাহাবুবউল আলম হানিফের স্ত্রী ফৌজিয়া আলম। আর হানিফ ছিলেন ওই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন হানিফের আস্থাভাজন হেলথকেয়ার ফার্মার সিইও হালিমুজ্জামান। ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি ছিলেন আর্কিটেক্ট তারিক হাসান। কোষাধ্যক্ষ ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান, সদস্য ছিলেন ইবির আইন বিভাগের অধ্যাপক সেলিম তোহা এবং গার্মেন্টস মালিক আব্দুল মান্নান।


সূত্র বলছে, হানিফ ও তার স্ত্রী ট্রাস্টি বোর্ড থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলেও তারা সবাই এখনো ট্রাস্টি বোর্ডে বহাল রয়েছেন। কৌশলে শুধু পদধারী কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে বাদ দিয়ে পুরো ট্রাস্টি বোর্ড নিজের আয়ত্তে রেখেছেন হানিফ।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদন নেওয়ার ক্ষেত্রেও নানা অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে। ২০২৩ সালে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং স্টেটের ৬ ও ৭ নম্বর প্লটের সাবেক উপজেলা চেযারম্যান ও হানিফের ভাই আতাউর রহমান আতার নির্মাণাধীন বাড়ির ঠিকানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে আতার সম্পদ নিয়ে দুদকের মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হলে লালন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়।

বর্তমান জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ডিজাইন না মেনে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মাসিক ৩ লাখ টাকায় ভবনের সপ্তম ও অষ্টম তলা হানিফকে ভাড়া দেন তৎকালীন চেয়ারম্যান ও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের অক্টোবরে মঞ্জুরি কমিশন থেকে ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করা হয়। নভেম্বরে শুরু করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৪ জন শিক্ষক এবং ৩৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। মোট পাঁচ বিভাগের ভর্তি কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রতি বিভাগে ৪০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন রয়েছে। চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ বিভাগে ১০১ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।

জানা গেছে, ভারতে বসেই পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ মঞ্জুরি কমিশন থেকে পরিবর্তন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড। চলতি বছর থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন নিয়েছেন। ধুমধাম করে শুরুও করেছেন শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সাজানো হয়েছে ‘লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়’।

এ ছাড়া বিএনপিপন্থি এক শিক্ষক নেতাকে উপাচার্য নিয়োগের চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য নিয়োগের জন্য ৩ জনের একটি প্যানেল মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্যানেলের প্রথমেই রয়েছেন ইবির কম্পিউটর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও জিয়া পরিষদের সভাপতি ফারুকুজ্জামান। প্যানেলের অন্য দুজন হলেন ইবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান ও ইইই বিভাগের শরিফুল ইসলাম।

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান বলেন, বর্তমানে হানিফসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ট্রাস্টি বোর্ডে পদধারী যারা ছিলেন, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। হানিফ ও তার স্ত্রী ট্রাস্টি বোর্ড থেকে রিজাইন দিয়ে চলে গেছেন। পরে ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্তে আমাকে চেয়ারম্যান ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ইউজিসির ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিকের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পেরেছে। আর স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য সনদপত্র পেয়েছে মাত্র ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

সর্বশেষ

Editor & Publisher: Md. Abdullah Al Mamun

Office: Airport haji camp

Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com

Developed by RL IT BD