প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

প্রেম থেকে ছেলেকে ফেরাতে পাগলা মসজিদে মায়ের চিঠি

৩১ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪৭:৪০

ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হলে ভক্তদের দেওয়া অর্থ ও অর্ঘ্যের মধ্যে পাওয়া গেল এক মায়ের অশ্রুভেজা চিঠি। সাধারণত দানবাক্স টাকাপয়সা, সোনাদানা বা বৈদেশিক মুদ্রায় পূর্ণ থাকলেও, এই চিঠিতে উঠে এসেছে এক মায়ের বুকভরা হাহাকার, দুশ্চিন্তা আর সন্তানের জন্য অনন্ত প্রার্থনা।

চিঠির শুরুতেই মা লিখেছেন, “প্রিয় পাগলা বাবা, আমি আপনার একজন ভক্ত।” এরপরই সন্তানের মঙ্গলের জন্য একাধিক আকুতি জানানো হয়েছে। ছেলে যেন প্রেমের বাঁধন থেকে ফিরে আসে, কলঙ্কের হাত থেকে রক্ষা পায় এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করে, সেই মিনতি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মেয়ের ভবিষ্যতের জন্যও মায়ের আবেদন – একটি সুষ্ঠু জীবন, ভালো পাত্র এবং বিশেষভাবে বিসিএসের একটি সিট পাওয়ার জন্য ভিক্ষা চেয়েছেন মা।

চিঠির ভাষা সরল ও আঞ্চলিক টানে ভরা হলেও, প্রতিটি শব্দে যেন অশেষ মমতা ফুটে উঠেছে। মা লিখেছেন, “পাগলা বাবা গো, নতুন কইরা আর কোনো বিপদ-আপদ না দিয়া বাসার কাজটা শেষ করাইয়া দিয়া বাসায় উঠাইয়া দেন—এইটুকু দয়া করেন। আমার ছেলেটারে এই মেয়েটার থেকে মনটা পরিবর্তন কইরা দেন। আমার বাবাটারে কলঙ্কের হাত থেকে বাঁচাইয়েন। আমার মেয়েটারে স্পেশাল বিসিএসের একটা সিট ভিক্ষা দিয়েন। মেয়েটারে কষ্ট দিয়েন না, নিরাশ কইরেন না।” এই চিঠিটি শুধু এক মায়ের ব্যক্তিগত প্রার্থনা নয়, এ যেন বাংলার সকল মায়ের প্রতিচ্ছবি, যারা সন্তানের সুখ, নিরাপত্তা আর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ঈশ্বরের কাছে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন।

শনিবার (৩০ আগস্ট) সকাল ৭টায় হারুয়া এলাকার পাগলা মসজিদের ১৩টি দানসিন্দুক খোলার কাজ শুরু হয়। এবারের গণনায় রেকর্ড ৩২ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। দান গণনার কাজে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন, যার মধ্যে ছিলেন মসজিদ কমপ্লেক্সের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্থানীয় মাদরাসার ছাত্র এবং রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, এর আগেও চলতি বছরের ১২ এপ্রিল দানবাক্স খোলা হয়েছিল, যেখানে ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়। এবার নতুন করে আরও তিনটি দানবাক্স যুক্ত হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, এবারের মোট দানের সংগ্রহ শত কোটির ঘর ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে পাগলা মসজিদের ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৯০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এফডিআর জমা আছে, যার লভ্যাংশ গরিব, অসহায় ও অসুস্থদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।

দানবাক্স খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনী, আনসার, জামাতের জেলা আমীরসহ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য

Ad