দেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েডের টিকা দেবে সরকার

১০ আগস্ট ২০২৫, ১১:১১:৫৭

ছবি: সংগৃহীত

সরকার দেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)-এর আওতায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর ১১ মাস ২৯ দিন বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশুকে এই টিকা দেওয়া হবে।

টিকা গ্রহণের জন্য vaxepi.gov.bd/registration/tcv ঠিকানায় গিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর প্রয়োজন হবে। গত ১ আগস্ট থেকে এই নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের পর ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করতে হবে, যা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েই সরাসরি পাওয়া যাবে।

ইপিআই প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, যাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ নেই, তারাও টিকা নিতে পারবে। এই ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে এবং তাদের টিকা গ্রহণের তথ্য কাগজে লিখে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ কর্মদিবস দেশের স্কুলগুলোতে ক্যাম্প করে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। এরপর আট দিন ইপিআই সেন্টারে স্কুলে না যাওয়া শিশুদের টিকা দেওয়া হবে।

ইপিআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এক ডোজ ইনজেকটেবল এই টিকা ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে। গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সহায়তায় এই টিকাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে।

টাইফয়েড: সংক্রমণ ও উপসর্গ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)–এর তথ্য অনুযায়ী, টাইফয়েড জ্বর হলো স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি সিস্টেমিক সংক্রমণ, যা সাধারণত দূষিত খাদ্য বা পানি গ্রহণের মাধ্যমে ছড়ায়। এর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে—দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া। উপসর্গগুলো অস্পষ্ট হওয়ায় অনেক সময় এটি অন্যান্য জ্বরজনিত রোগ থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

রোগের তীব্রতা ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে বা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। টাইফয়েড মূলত এমন এলাকায় বেশি দেখা যায়, যেখানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল এবং নিরাপদ পানির অভাব রয়েছে। প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে।

====

টাইফয়েডের টিকা নিয়ে অনেক অভিভাবকের মধ্যে এখনো দ্বিধা রয়েছে। বিশেষ করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকে। তিন বছরের মেয়েকে টিকা দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আহসান হাবিব। তিনি বলেন, এবারই তো প্রথম সরকারিভাবে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাই কিছুটা ভয় পাচ্ছি। ভাবছি ক্যাম্পেইন শেষ হোক, এরপর আগামী বছর মেয়েকে দেব। তাই এবার নিবন্ধন করিনি।

এ প্রসঙ্গে গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ার ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, টাইফয়েড ভ্যাকসিন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। এটি শতভাগ নিরাপদ। পৃথিবীর অনেক দেশে এটি ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশেও আগে পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হয়েছে। কোভিডের আগেই টাঙ্গাইলে পাইলট প্রকল্পে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এরপর সরকার গ্যাভিকে এই কর্মসূচিতে সহায়তা চায়। আগে এই ভ্যাকসিন বেসরকারিভাবে কিনে দিতে হতো, এবার সরকার বিনামূল্যে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি শিশুকে দিচ্ছে।

ইপিআই প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, টাইফয়েডের ভ্যাকসিন দেশে অনেক আগেই এসেছে। আগে অভিভাবকেরা এটি কিনে দিতেন, এবার সরকারই বিনামূল্যে দেবে। ওষুধের মতো এরও কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, তবে বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটি একটি নিরাপদ ভ্যাকসিন।

====

ডব্লিউএইচও টাইফয়েড জ্বর নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে তিন ধরনের ভ্যাকসিনের সুপারিশ করছে। এর মধ্যে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি)-কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, কারণ এটি উন্নত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং কম বয়সী শিশুদের জন্য উপযোগী ও দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দেয়।

তবে সংস্থাটি বলেছে, টিকাদান কর্মসূচি অবশ্যই রোগ নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা, নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণসহ যথাযথ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য