জুলাই আন্দোলন
‘আপনাদের তো অনেক টাকা দেওয়ার কথা, পান নাই’—শুনতে হলো নিহতের স্ত্রীকে

ছবি: সংগৃহীত
‘আজ একটি বছর হয়ে গেল, আমার স্বামীর ময়নাতদন্তের রিপোর্টই পেলাম না। রিপোর্টের জন্য থানা ও এসপির অফিসে গিয়েছি। তখন আমাদের বলা হয়েছে, “আপনাদের তো অনেক টাকা দেওয়ার কথা, টাকা পান নাই?” এই এক বছরেও স্বামী হত্যার বিচার দেখতে পেলাম না। আমার স্বামী কি দেশের জন্য জীবন দিয়ে অপরাধ করেছে? কেন আজও আমরা অবহেলিত, এতটা অসহায়? আমাদের সন্তানের কান্না শুধু আমরাই শুনতে পাই। আমাদের হারাইছে, আমরাই বুঝি এই যন্ত্রণা কতটা বেদনাদায়ক।’”
আজ শনিবার ফরিদপুরে ‘মাদারস অব জুলাই’ অনুষ্ঠানে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শহরের পূর্ব খাবাসপুর এলাকার শামসু মোল্যার স্ত্রী মেঘলা বেগম। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ফরিদপুরে নিহত হন শামসু।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসন এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। এতে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জুলাইয়ে হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা। নিহতদের স্বজনদের কণ্ঠে ছিল এক বছরেও বিচার না পাওয়ার হতাশা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ পরিবারের মায়েদের গল্প শোনানো হয়। এ সময় মাইক্রোফোন ধরতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন শহরের গোয়ালচামট এলাকার নিহত জানে শরীফ মিঠুর মা হানুফা আলম। তিনি কান্নারত অবস্থায় বলেন, ‘আজ এক বছর হয়ে গেল, মা ডাক শুনি না। এক বছরেও আমার ছেলে হত্যার বিচার পেলাম না। আমি শাস্তি চাই।’ এই কথা বলেই টেবিলে মাথা রেখে অবিরত কাঁদতে থাকেন তিনি।
জেলা সদরের তায়জুদ্দিন মুন্সী ডাঙ্গী গ্রামের নিহত সিরাজুল ইসলাম ব্যাপারীর মা-ও বিচার না পাওয়ার কথা তুলে ধরেন। এ সময় সিরাজুলের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী শহীদ হয়েছে, স্বৈরাচারবিরোধী লড়াই করেছে। কিন্তু আজও জুলাই সনদ বা স্বীকৃতি পেল না। যাদের জন্য দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদের কেন স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।’
অনুষ্ঠানে জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসউদা হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শামসুল আজম। তিনি নিহত শামসুর স্ত্রী মেঘলার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হয়েছে। গত ২৪ জুলাই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি। দ্রুতই তা দাখিল করা হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ, সাবেক মুখ্য সংগঠক কাজী জেবা তাহসীন, সাবেক সদস্যসচিব সোহেল রানা, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আর এম হৃদয়সহ অনেকে। তাঁরা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা ব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়েছিলেন কিন্তু সেই অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি এখনো চলমান। তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। আজও জুলাইয়ে শহীদদের মায়েদের কান্না শুনতে হয়। তাঁরা নিরাপত্তার জন্য জুলাই সনদ চান, অধিকার চান, যাতে পরে কোনো সরকার এসে তাঁদের গ্রেপ্তার না করে।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য