রবিবার ৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ
 

জুলাই গণঅভ্যুত্থান

ঢাকার রাজপথে ঝরলো ভোলার ৪৭ প্রাণ

২ আগস্ট, ২০২৫ ১২:৪৯:৪০
ছবি: সংগৃহীত

রাজপথে ছিল উত্তাল, চোখে ছিল বেঁচে থাকার স্বপ্ন, আর বুকে ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের উত্তপ্ত ঢাকায় যখন শুরু হয় গণঅভ্যুত্থান, তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা হাজারো মানুষের মধ্যে ছিলেন ভোলারও শত শত সন্তান। জীবন ও জীবিকার সন্ধানে শহরে এলেও তারা ঘরে ফেরেননি-ফিরেছেন লাশ হয়ে, কফিনে বন্দী হয়ে। এই বিপ্লবের রক্তাক্ত রাজপথে প্রাণ দিয়েছে ভোলার ৪৭ জন সাধারণ মানুষ-যাদের কেউ ছিলেন শ্রমিক, কেউ ছাত্র, কেউ বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

এক বছর পেরিয়ে গেলেও থামেনি স্বজন হারানো পরিবারগুলোর বুকভাঙা কান্না। ঢাকার রাজপথে ঝরেপড়া এই তাজা প্রাণগুলো হয়ে উঠেছে এক অনন্ত বেদনার নাম, যেখানে শহীদের রক্ত মিশে আছে ভোলার মাটির সঙ্গে, আর তাদের স্বপ্ন মিশে আছে আগামী প্রজন্মের চোখে।

ভয়ঙ্কর সেই দিনগুলোতে স্বৈরশাসকের বিষাক্ত বুলেটের আঘাতে কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ ভাই, কেউ স্বামী-সন্তান আবার কেউবা হারিয়েছেন ভালোবাসার আপন মানুষটিকে। জুলাই বিপ্লবের সেই রক্তাক্ত রাজপথের পাষন্ডতার নির্মম আঘাতে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে বহু পরিবারই এখন সীমাহীন কষ্ট আর সংকটে দিনাতিপাত করছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা।

জীবিকার তাগিদে শহরে যাওয়া সেই মানুষগুলোর কেউ আর জীবিত ফেরেননি। ভবিষ্যৎ গড়ার এক বুক আশা নিয়ে যে ছেলেটি গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে স্বপ্নের জাল বুনেছিল তার নিথর নিস্তব্ধ দেহটির জায়গা হয়েছে সেই গ্রামেরই মসজিদের পাশের সাড়ে তিনহাত মাটির ঘরে। তারা পরিবারের কাছে এখন আছে শুধুই স্মৃতির মিনার হয়ে।

জুলাই বিপ্লবকালে নিহতদের মধ্যে একজন শুধু ভোলা সদরে, আর বাকিদের মৃত্যু ঘটে ঢাকার রাজপথে। এসকল শহীদের অধিকাংশরই দাফন সম্পন্ন হয় ভোলার বিভিন্ন উপজেলার নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে।

তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা ২১ দিনের একটানা আন্দোলনের মাত্র তিন দিনেই প্রাণ হারান ভোলার ৩৩ জন। এর মধ্যে ১৯ জুলাই শহীদ হন ১৩ জন, ৪ আগস্ট ১১ জন এবং ৫ আগস্ট শহীদ হন ৯ জন।
শহীদদের মধ্যে রয়েছেন-ছাত্র, দোকান কর্মচারী, ট্রাক চালক-হেলপার, রাজমিস্ত্রি, গার্মেন্টসকর্মী, ফুটপাতের দোকানদার, সিএনজি চালক, মসজিদের ইমাম, রিক্সা চালক ও শ্রমিক, শিশুসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। নিহতরা সকলেই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। জুলাই বিপ্লবের এক বছর পেরিয়ে গেলেও থামেনি স্বজন হারা মানুষের কান্না আর বুকফাটা আহাজারি।

তথ্যানুযায়ী, ঢাকায় যারা শহীদ হন তাদের মধ্যে ভোলা সদর উপজেলার ১২ জন, দৌলতখানের ৩ জন, তজুমদ্দিনের ১ জন, লালমোহনের ১১ জন, চরফ্যাশনের ১২ জন এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলার শহীদ হয়েছেন ৯ জন।

ঢাকার রাজপথে ভোলা সদর উপজেলার শহীদরা হলেন- ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মো. শামিম হাওলাদার (৩৮), স্কুল শিক্ষার্থী মিরাজ ফরাজী (১৮), রিকশা চালক মো. ইমন (২২), ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৬), মুদি দোকানী মো. মহিউদ্দিন (২৬), বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জুলফিকার আহমেদ শাকিল (২৩), সিকিউরিটি গার্ড মো. আলাউদ্দিন মল্লিক (৫৭), শ্রমিক মো. রনি (২৩), ছাতা মেরামতকারী মো. জসিম উদ্দিন (৪৪), গাড়ী চালক মো. বাবুল (৪০), শ্রমিক জহিরুল ইসলাম শুভ (৩২) এবং দোকান কর্মচারী মো. হাছান (১৮)।
দৌলতখান উপজেলার শহীদ ব্যাক্তিরা হলেন, ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান (২৬), রাজমিস্ত্রি মো. রিয়াজ (২৬) এবং গাড়ি চালক মো. শাহিন (২৪)।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার শহীদ ব্যাক্তিগন হলেন- বিকাশকর্মী মো. নাহিদুল ইসলাম (২১), ট্রাক শ্রমিক মো. সুজন (২২), রাজমিস্ত্রি মো. ইয়াছিন (২৩), রিকশাচালক মো. জামাল উদ্দিন (৩৫), কলেজ শিক্ষার্থী দীপ্ত দে (২২), গৃহকর্মী লিজা আক্তার (২৩), দোকান কর্মচারী মো. নয়ন (৩৪), গার্মেন্টসকর্মী মো. জাকির হোসেন (২৬) এবং গার্মেন্টসকর্মী মো. সোহেল রানা (২২)।

তজুমদ্দিন উপজেলার শহীদ হলেন- ঝুট ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন (৩৪)।

লালমোহন উপজেলার শহীদরা হলেন- হোটেল কর্মচারী মো. আরিফ (১৭), লন্ড্রি দোকানি মো. মোছলেহ উদ্দিন (৩৫), রিকশাচালক মো. আক্তার হোসেন (৩৫), মসজিদের ইমাম মুফতি শিহাবউদ্দিন (৩০), মিষ্টির দোকানের কর্মচারী মো. শাকিল (২০), মাইক্রোচালক মো. হাবিবুল্লাহ (৪০), হোটেল কর্মচারী মো. সাইদুল (১৪), কোম্পানির বিপণনকারী মো. ওমর ফারুক (১৭), সিএনজি চালক মো. সবুজ (২১), ট্রাক হেলপার মো. আক্তার হোসেন (২৭) এবং সবজি বিক্রেতা মো. হাসান (৩০)।

চরফ্যাশন উপজেলার শহীদরা হলেন, ফুটপাতের দোকানি মো. সিয়াম (১৫), বেসরকারি চাকরিজীবী মো. রাকিব মোল্লা (২৫), কোম্পানির বিপণনকর্মী মো. সোহাগ (১৭), রাজমিস্ত্রি মো. বাহাদুর হোসেন মনির (১৮), গার্মেন্টস কর্মী মো. ফজলু (২৮), রাজমিস্ত্রি মো. ফজলে রাব্বি (২০), ইন্টারনেট কর্মী মো. হাসনাইন (২৫), কলেজ শিক্ষার্থী মো. মমিন (১৯), ট্রাক চালক মো. হোসেন (২৫), দোকান কর্মচারী মো. হাবিবুর রহমান (২৯), মুদি দোকানের কর্মচারী মো. ওমর ফারুক (১৬) এবং দর্জি মো. তারেক (১৮)।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন, ভোলার সন্তানরা। তিনি বলেন, স্বজন হারানো এসব পরিবারগুলোর ক্ষতি কখনোই পূরণ হবার নয়। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারগুলোর পাশে থাকার চেষ্টার কোনো ক্রুটি হচ্ছেনা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময়ে সহায়তা দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও যেকোনো প্রয়োজনে প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসনের এ শীর্ষকর্তা।বাসস।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

সর্বশেষ

Editor & Publisher: Md. Abdullah Al Mamun

Office: Airport haji camp

Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com

Developed by RL IT BD