বড় বোন পালিয়ে বিয়ে করায় ৪ বছর ধরে অবরুদ্ধ ছোট বোন, বন্ধ লেখাপড়া

সংগৃহীত
এবার জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বড় মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করায় ছোট মেয়েকে ৪ বছর ধরে বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে নির্যাতনে মানসিক রোগী করার অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার করেছে মেয়েটিকে। শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় আক্কেলপুর পৌর এলাকার হাসপাতালের পিছনে এনামুলের বাড়ি থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ৫ বছর আগে অবসরপ্রাপ্ত মেডিকেল এ্যাসিট্যান্ট এনামুল হকের বড় মেয়ে ভালবেসে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। এরপর ৪ বছর আগে ২০২১ সালে ছোট মেয়ে লিজা এসএসসি পাশের পর থেকেই পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়ে নিজ বাড়িতে একটি ঘরে আবদ্ধ করে রাখে। এরপর মেয়েটিকে বেশি সময় ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখা হতো। কখনো মেয়ে প্রতিবাদ করলেই বাবা এনামুল ও সৎ মা দুজনে মিলে শারিরিক নির্যাতন চালাতো।
এক পর্যায়ে মাথা ন্যাড়া পর্যন্ত করে দিয়েছে। প্রতিবেশীদের ওই বাড়িতে কখনো প্রবেশ করতে দিত না এনামুল। সব সময় বাড়ির গেটে ঝুলতো তালা। তবে প্রতিবেশীরা মেয়েটির আর্তনাদ শুনতে পেত। এর ফলে আস্তে আস্তে মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছে। এনামুলের ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পেত না। মেয়েটির ওপর এমন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে বাড়িতে প্রবেশ করে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। এরপর আপাতত মেয়েটিকে মুক্ত করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বাবাকে নির্দেশ দেয় পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা তুহিন জানান, লিজা নামে মেয়েটি আগে সুস্থ ছিল। লেখাপড়াও ভাল করতো। প্রায় ৪ বছর আগে লিজার বোড় বোন ভালবেসে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। ছোট মেয়ে যেন এমন কাজ না করতে পারে এজন্য কয়েক বছর ধরে নিজ বাড়িতে আবদ্ধ করে রাখা হয়। গত কয়েক বছরে বাড়ির বাহির হতে দেয়নি মেয়েটাকে। চালানো হতো মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে মেয়েটি মানসিক রোগীতে পরিণত হয়। আর সব সময় বাড়ির গেটে তালা লাগানো থাকতো। এজন্য বাড়িতে আশপাশের লোকজন প্রবেশ করতে পারতো না। শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয়রা বাড়িতে প্রবেশ করে মেয়েটির করুণ দৃশ্য দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি অনেকেই।
প্রতিবেশী জনি জানান, মেয়েটিকে তার বাবা এনামুল বদ্ধ ঘরের মধ্যে আটকে রেখে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুমিয়ে রাখতো। কোন এক সময় মাথার চুলও কেটে দিয়েছে। মাঝে মধ্যে মেয়েটির চিৎকারে খারাপ লাগলে এনামুলের দাপটে কথা বলার সাহস হয়নি। মেয়েটিকে এখন চিকৎসা করলেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় এনামুলের বিচার দাবি করেন তিনি। লিজার সৎ মা ফেরজা ওরফে ফিতি জানান, তার স্বামী স্ত্রী মারা যাওয়ার তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তবে ম্বামীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কখনো কথা বলার সাহস হয়নি। বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় গেটে তালা মেরে বের হয়। আবার ফিরে এসে তালা খুলে দেয়। এজন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগ নাই। স্বামীর ইচ্ছেই সবকিছু চলে।
লিজার বাবা এনামুল হোসেন জানান, তিনি মেডিকেল এ্যাসিন্টেট হিসেবে সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। বর্তমানে অবসরে আছেন। নিজ বাড়িতেই এখনো নিয়মিত রোগী দেখেন। তার বড় মেয়ে লেখাপড়া করতে গিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন। এতে তার মান সম্মানের ক্ষতি হয়েছে। ছোট মেয়ে লিজা ২০২১ সালে এসএসসি পাশ করেন। লেখাপড়াতেও ভাল ছিল। মেয়েটি সুন্দর হওয়ায় ছেলেরা বিরক্ত করতো। এ কারণে তার লেখা পড়া বন্ধ করে বাড়িতে রেখে বাড়ির বাহিরে বের হতে দেয়নি। আমি সকালে তালা মেরে যাই আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তালা খুলে দেয়। বর্তমানে মেয়েটি অসুস্থ। পুলিশ ও স্থানীয়রা এসে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে মেয়েটিকে দেখেছে। সবার সামনে মেয়েটি কথাবার্তা স্বাভাবিক বলেনি। তবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য না। পুলিশ মেয়েটিকে অবমুক্ত করে দ্রুত চিকৎসা করার কথা বলে গেছেন।
এ ব্যাপারে আক্কেলপুর থানার উপ-পরিদর্শক গনেশ চন্দ্র জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একটি আবদ্ধ ঘর থেকে অসুস্থ মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য