‘আমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড আমার চোখের সামনেই মারা গেছে’

ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান হাসান, নিজের ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় চোখের কীভাবে বেস্ট ফ্রেন্ডকে হারিয়েছেন সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে কাছে।
গতকাল ফারহান হাসানের একটি পরীক্ষা ছিলো। বেলা একটায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। এমন সময় হঠাৎ করেই বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি তাদের সামনে আছড়ে পড়ে।
ফারহান বলেন, ‘আমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড, যে পরীক্ষার হলে একসঙ্গে ছিল, আমার চোখের সামনেই মারা গেছে।’
বিধ্বস্ত হওয়ার সময় বিমানটি স্কুলের একটি ভবনে আঘাত করে। ঘটনাটি ঘটে স্কুল ছুটির ঠিক আগ মুহূর্তে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল ছুটি হবে হবে- এমন সময় বিমানটা সরাসরি জুনিয়র সেকশনের বিল্ডিংয়ে আঘাত করে, যেখানে নার্সারি, ওয়ান, টু, থ্রি- এসব শ্রেণির ক্লাস হয়। বিল্ডিংয়ের গেটে একেবারে গর্ত হয়ে আগুন ধরে যায়।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ঘটনার কিছু ভিডিওতেও স্কুলের বাগান সংলগ্ন একটি ভবনের নীচতলায় বিধ্বস্ত বিমানের ইঞ্জিনে আগুন জ্বলার দৃশ্য দেখা যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। সেইসঙ্গে চলতে থাকে উদ্ধার তৎপরতা।
এ ঘটনায় বিমানটির পাইলট ও স্কুলের শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ২৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হতাহতদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
তবে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা জানানো হয়েছে ২০ জন। এছাড়া পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় আটজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার রাত দেড়টার দিকে এ তথ্য জানায় আইএসপিআর।
এদিকে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৭৮ জন মানুষ আহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ অনেককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী।
এ ঘটনার মঙ্গলবার (২২ জুলাই) একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ঘটনাটি কীভাবে ঘটলো, সেটি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
গতকাল উত্তরায় যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই মডেলের যুদ্ধবিমান বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইসফাক ইলাহী চৌধুরী জানান, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি মূলত প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
চীনে তৈরি এফ সেভেন মডেলের বিমানগুলো প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ব্যবহার করে আসছে বলেও জানান তিনি।
ঘটনার পর এক বিবৃতিতে আইএসপিআর জানিয়েছে যে, নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সোমবার দুপুর একটা ছয় মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলার বিমান বাহিনী ঘাঁটি থেকে বিমানটি উড্ডয়ন করে।
বিমানটি চালাচ্ছিলেন বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম। উড্ডয়নের মিনিট দশেকের মধ্যেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয় বলে জানা যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ বিমানটির বিধ্বস্তের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটলো, সরকার সেটি খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
এদিকে, ঘটনার পর প্রকাশিত বিবৃতিতে আইএসপিআর দাবি করেছে যে, উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। এ বিষয়ে তদন্তের পরে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
আইএসপিআর বলছে, দুর্ঘটনা মোকাবেলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উক্ত বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাবার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল এবং কলেজ এর দোতালা একটি ভবনে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
ঘটনা কারণ জানতে ইতোমধ্যে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি ‘উচ্চ পর্যায়ের’ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে আইএসপিআর।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য