শনিবার ৫ জুলাই, ২০২৫, ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

স্ত্রীর কিডনিতে প্রাণে বেঁচে ‘পরকীয়ায় জড়ালেন’ স্বামী!

৩ জুলাই, ২০২৫ ৩:১৬:১২
সংগৃহীত

এবার নিজের কিডনি দিয়েছিলেন স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে। কিন্তু সুস্থ হয়ে সেই স্বামীই জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া ও অনলাইন জুয়ায়। একসময় যে নারীর আত্মত্যাগে তিনি বেঁচে ছিলেন, তাকেই মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এখন প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস করছেন। সাভারের কলমা এলাকায় ঘটে যাওয়া এই অমানবিক ঘটনায় নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন উম্মে সাহেদীনা টুনি নামে এক নারী। গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্ত মো. তারেক।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে কলেজপড়ুয়া তরুণী উম্মে সাহেদীনা টুনির সঙ্গে মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবক মো. তারেকের বিয়ে হয়। শুরুটা ছিল স্বপ্নময়, ভালোবাসা আর ভরসায় গড়া এক নতুন জীবনের সূচনা। বিয়ের এক বছর পরই তারেক ও টুনির সংসার আলো করে আসে একটি পুত্রসন্তান। ভালোবাসার বন্ধন আরও দৃঢ় হয় নবজাতকের স্পর্শে। সন্তানের নাম রাখা হয় আজমাইন দিব্য- যাকে ঘিরে তারা বুনেছিলেন সুখের এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন। তবে সেই স্বপ্ন খুব বেশি দিন টিকলো না। বিয়ের মাত্র দুই বছরের মাথায় টুনি জানতে পারেন তার স্বামী তারেকের দুটি কিডনিই প্রায় অচল। তখন সদ্য এক সন্তানের মা টুনি, সংসার জীবনেরও শুরু মাত্র। কিন্তু ভালোবাসার টানে ভেঙে পড়েননি। স্বামীকে বাঁচাতে নেন ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। শেষমেশ স্বামীকে বাঁচাতে টুনি নিজেই দেন নিজের একটি কিডনি।

এদিকে টুনি ভেবেছিলেন, স্বামী সুস্থ হলে মিলবে ভালোবাসা আর স্বস্তি। কিন্তু বাস্তবটা ছিল নির্মম। কিডনি পেয়ে সুস্থ তারেক ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়, আসক্ত হন অনলাইন জুয়ায়। এরপর শুরু হয় টুনির উপর নির্যাতন। একসময় সেই নারী, যিনি জীবন দিয়ে বাঁচালেন স্বামীকে, তাকেই মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন তারেক। উঠেন ডিভোর্সি প্রেমিকার সঙ্গে।

উম্মে সাহেদীনা টুনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তারেককে কিডনি দেয়ার পর আমার শরীর ক্রমেই ভেঙে পড়ছিল। সাতদিন আইসিইউতে থাকার পর যখন কেবিনে উঠি, তখন যেন এক ভিন্ন তারেককে দেখি। যে মানুষটার জন্য সব ত্যাগ করেছি, নিজের জীবনটাও বিলিয়ে দিতে চেয়েছি- সে-ই সুস্থ হয়ে আমাকে চিৎকার করে বকাঝকা শুরু করল, মারধরের হুমকি দিল। কারণ, আমার এক খালা নাকি অপারেশনের আগে টাকা পাঠাতে দেরি করেছিলেন!’

এই দৃশ্য দেখে হাসপাতালের চিকিৎসকরাও হতবাক হয়ে যান। অপারেশন করা চিকিৎসক দুজনকে চেম্বারে ডেকে বলেন, ‘যদি তোমার মা হয় তোমার জন্মদাতা, এই নারী তোমার জীবনদাতা। তার কারণেই তুমি ফিরে পেয়েছ নতুন জীবন। তার সঙ্গে এমন আচরণ কীভাবে করতে পারো?’ সেদিন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যান তারেক। কিন্তু দেশে ফিরে আসার পর টুনির জীবনে নামে ঘোর অন্ধকার। সুস্থ তারেক কোনো কাজ বা ব্যবসা শুরু না করে উল্টো স্ত্রী টুনিকে নিজের উপার্জনের সব টাকা দিতে বলেন, আর শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে তিনি অনলাইন জুয়া ও পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন।

টুনি আরও বলেন, ‘তারেক প্রায়ই কাজের অজুহাতে ঢাকায় যেত। পরে জানতে পারি, তাহমিনা নামে এক ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরকীয়া চলছে। মোবাইল ঘেঁটে পেয়ে যাই সেই প্রমাণ। এসব নিয়ে মুখ খুলতেই নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। এক সময় সে আমাকে পুরো বাড়ি তার নামে লিখে দেয়ার জন্য চাপ দেয়, ডিভোর্স চাইতে থাকে।’ স্বামীর লাগাতার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত গত ২ ফেব্রুয়ারি সাভার থানায় স্বামী মো. তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন উম্মে সাহেদীনা টুনি। কিন্তু কৌশলী ও ধূর্ত তারেক খুব দ্রুতই পাল্টে ফেলেন নিজের মুখোশ। স্ত্রীকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মাত্র একদিন পর, ৪ ফেব্রুয়ারি থানায় মুচলেকা দিয়ে টুনিকে দিয়ে অভিযোগ তুলে নেন তিনি।

বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়ার পর তারেক আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নির্যাতনের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যায়। একপর্যায়ে টুনি প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে। এরপর ২২ এপ্রিল ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন তিনি। এ মামলায় ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন তারেক এবং প্রায় এক মাস কারাগারে থাকেন। কিন্তু ৪ জুন জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি সরাসরি গিয়ে ওঠেন তার পরকীয়া প্রেমিকা তাহমিনার বাড়িতে। সেখান থেকেই আবারও শুরু হয় টুনির উপর মানসিক চাপ- ডিভোর্স দিতে হবে এবং টুনির নামে থাকা বাড়িটি লিখে দিতে হবে তারেকের নামে।

এদিকে জামিনে মুক্তির পর থেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন তারেক। নিজের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ফেলায় গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে বহুবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এমনকি তার আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকেও পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, তারেকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

Editor & Publisher: Md. Abdullah Al Mamun

Office: Airport haji camp

Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com

Developed by RL IT BD