ই-ক্যাব নির্বাচন ঠেকাতে দোসরদের ষড়যন্ত্র, সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ

ই-কমার্স খাতের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে বহুল প্রত্যাশিত ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের নির্বাচন বন্ধ করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি পতিত স্বৈরাচারের দোসর ও সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠী। । নির্বাচন হলে তাদের আধিপত্য থাকবেনা—সেই ভয়ে তারা এখন নির্বাচন ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছে। জানা যায়, ৫ আগস্টের পর স্বৈরাচার পতনের পর থেকেই নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তিবর্গ বিভিন্ন উপায়ে ই-ক্যাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। প্রথমে সহায়ক কমিটির মাধ্যমে ই-ক্যাব চালানো এবং নির্বাচন ছাড়া সহায়ক কমিটি দিয়েই লম্বাসময় ই-ক্যাব চালানোর চেষ্টা করে তারা। সাধারন সদস্যদের চেষ্টায় তাদের এই পরিকল্পনা সফল হয়নি এবং প্রশাসকের দৃড়তায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হয়। এরপর এই চক্রটি বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক তদবির, হুমকিধামকি, প্রশাসক ও বানিজ্য মন্ত্রনালয়ে বিভিন্ন মনগড়া বিষয়ে চিঠি দিয়ে নির্বাচন পেছানো ও স্থগিতের চেষ্টা করে আসছে।
তাদের এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ই-ক্যাবের সাধারন সদস্যরা অবগত এবং অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। অনুসন্ধান করে জানা যায়- যারা নির্বাচন পেছানোর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন তারা ই-ক্যাবের সাধারন সদস্যদের কাছে অত্যন্ত অজনপ্রিয় ও অপছন্দের পাত্র। নির্বাচনে অংশগ্রহন করলে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবেন এটি জেনেই তারা বারবার নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র করছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে পুরনো ‘সিন্ডিকেট’ এবং স্বৈরাচারের দোসরদের অবস্থান হুমকিতে পড়বে। এ কারণেই তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে নানামুখী কৌশলে মাঠে নেমেছে—ভুয়া চিঠি, বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার, আদালত ও প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি—এসবের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করছে।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, ষড়যন্ত্রে জড়িতদের তালিকায় রয়েছে চাঞ্চল্যকর নাম। তাদের মধ্যে অন্যতম বিপ্লব ঘোষ রাহুল, যিনি বর্তমানে “এন্টারপ্রেনিয়ার ক্লাব অফ বাংলাদেশ (ই-ক্লাব)”-এর ২০২৫ সালের সেক্রেটারি জেনারেল এবং স্বৈরাচার আমলে বেসিস এর পরিচালক ছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের ‘জুলাই বিপ্লব’ চলাকালে সংঘটিত ছাত্র হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় অন্যতম শীর্ষ আসামী। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত, ঢাকা-তে (সি. আর. মামলা নং: ৬২০/২০২৪, মোহাম্মদপুর আমলী আদালত)। মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায়, যেখানে প্রধান আসামীদের তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, ফজলে নূর তাপস, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। জানা গেছে, বিপ্লব ঘোষ রাহুল নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছেন যাতে করে এই সময়ের মধ্যে তিনি ও দোসরদের বি টিম প্রস্তুত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। বিপ্লব ঘোষ রাহুলের সহযোগী আরেক আওয়ামী দোসর ও সুবিধাভোগী সোহেল মৃধা নামের বিতর্কিত ব্যক্তি, যিনি এই ষড়যন্ত্রের মুখ্য মুখ। আওয়ামী দোসর সোহেল মৃধা ই-ক্যাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার ও বিতর্কিত জয়েন্ট সেক্রেটারি নাসিমা আক্তার নিশার আস্থাভাজন ও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, সোহেল মৃধা নিয়মিতই আওয়ামী লীগের উন্নয়নের প্রচার প্রচারনা চালাতেন। সূত্র মতে, তিনি বিভিন্ন তদবির খাটিয়ে, সেশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য প্রচার করে এবং ভুয়া চিঠি দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অথচ বাস্তবতা হলো—সোহেল মৃধার নিজের কোনো সক্রিয় ই-কমার্স ব্যবসা নেই। এমনকি তার ঘনিষ্ঠদের মতে, তাঁর মনোনয়ন ফরম কেনারও সামর্থ্য নেই। বিপ্লব ঘোষের সহযোগী ও এন্টারপ্রেনিয়ার ক্লাব (ই-ক্লাব) প্রেসিডেন্ট খাইরুল করিম অন্তু (অন্তু করিম) আরেক বিতর্কিত চরিত্র। তিনি ছিলেন সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বিপুর ক্যাশিয়ার এবং বিপুর স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এই অন্তু করিম স্বৈরাচার সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগী হিসেবেই পরিচিত। তিনি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী পুলিশ কর্মকর্তা এডিসি নাজমুল ইসলাম সুমনের পার্টনার ও সহযোগী যার বিরুদ্ধে রয়েছে নির্যাতন, অর্থ আত্মসাৎ, নারী নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলের একাধিক অভিযোগ। এইসব তথ্য সামনে আসার পর সাধারণ সদস্যরা আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
নির্বাচন স্থগিত বা পেছানোর প্রশ্নে সদস্যদের অধিকাংশ প্রশ্ন তুলেছেন—যারা বছরের পর বছর ই-ক্যাবকে নিজেদের সম্পত্তির মতো ব্যবহার করেছেন, আজ তারা ভোটের ভয়ে আতঙ্কিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ই-ক্যাব মেম্বার বলেন,“যাদের নিজেরই ই-কমার্সে ব্যাবসা নেই, তারা ই-ক্যাবের নেতৃত্ব চাইছেন কিসের ভিত্তিতে?”
এ নিয়েই আরেক সদস্য রসিকতা করে বলেন— “যিনি নিজের ব্যবসাই চালাতে পারেন না, তিনি কীভাবে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন?”
আরেক ক্ষুব্ধ সদস্য বলেন, “ষড়যন্ত্রকারী ও দোসররা নিজেদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য বারবার নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে। তাদের নোংরামির জন্য ই-ক্যাব এখন অভিভাবকহীন অবস্থায়।”
আরেক সদস্য বলেন, “কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারনে ই-ক্যাব পিছিয়ে পড়ছে ও অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। এই বাজেটে ই-কমার্সের উপর ১৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। ই-ক্যাবের সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ না থেকে কাদা ছোড়াছোড়ি করলে এই সেক্টর এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সদস্য সরাসরি বলেন, “ই-ক্যাব যদি এসব দোসর, খুনি, হত্যা মামলার আসামী ও অপরাধীদের হাতে চলে যায়, তবে তা হবে আমাদের ডিজিটাল খাতের জন্য আত্মহননের শামিল।”
অন্যদিকে, ই-ক্যাবের প্রশাসক সাঈদ আলী এবং নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা চান নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন সম্পন্ন করতে। এই পরিস্থিতিতে সচেতন সদস্যরা আরও সুসংগঠিত হচ্ছেন। তারা বলছেন- ই-ক্যাব কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এই নির্বাচন সঠিক সময়ে হতেই হবে। সঠিক সময়ে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তারা।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
Office: Airport haji camp
Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com
Developed by RL IT BD
মন্তব্য