শনিবার ৭ জুন, ২০২৫, ০৩:০২ অপরাহ্ণ

‘গরু বিক্রি হলো, কিন্তু আব্বাকে আর পাব না’

৫ জুন, ২০২৫ ৮:১৯:১৬
ছবি: সংগৃহীত

‘ইচ্ছা ছিল একসঙ্গে গরু বিক্রি করে বাড়িতে যাব। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল। আব্বাকে হারালাম। গরু বিক্রি হলো, টাকা পেলাম। কিন্তু আব্বাকে আর পাব না।’

এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলে ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত গরু ব্যবসায়ী কোহিনুর শেখের ছেলে আরিফুল ইসলাম। তার বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নীচ পলাশী ফতেপুর গ্রামে। তিনি বুধবার (৫ জুন) ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা পশুর হাটে গরু বিক্রি করেন। বিকেলে কথা হয় তার সঙ্গে। 

তিনি বলেন, তিনটি গরুর মধ্যে দুটি বিক্রি হয়েছে। সেই গরুগুলো দাম পেয়েছি ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। আর একটা গরু আছে। সেটির দাম চাইছি ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। আশা করছি- বিক্রি হয়ে যাবে। কিন্তু গরু বিক্রি করতে এসে আব্বাকে হারালাম। বছর বছর গরু পালন করে বিক্রি করতে পারব। কিন্তু আব্বাকে তো আর পাব না।

আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, ১ জুন রাত সোয়া ১টার দিকে আমাদের ট্রাকটি মির্জাপুর থানার দেওহাটা এলাকায় থামানো হয়েছিল। এ সময় একটি সবজিবোঝাই ট্রাক এসে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন আব্বা। আমি গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নামলাম। হাতের ইশারায় এক ড্রাইভারের থেকে পানি চাইলাম। আব্বার মাথায় পানি দিলাম। ডাক পারলাম, আব্বা কথা কন। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক বলেন তিনি মারা গেছেন। আব্বা এমনি করে চলে গেল।

জানা গেছে- কোহিনুর শেখের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নীচ পলাশী ফতেপুর গ্রামে। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। কোহিনুর নিবন্ধিত জেলে। পদ্মায় মাছ ধরে ও কৃষিকাজ করে তিনি সংসার চালাতেন। তিনি প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রতি কোরবানি ঈদের হাটে বিক্রি করার জন্য বাড়িতে তিন থেকে চারটি করে গরু পালতেন। এবার তার তিনটি গরু ছিল।
কোহিনুরের মেয়ে আমেনা খাতুন বলেন, গত ৩১ মে রাতে আব্বার সঙ্গে কথা হয়েছিল। ফোনে আব্বাকে আমাকে বলেছিল ‘যমুনা সেতু পার হয়েছি, মা।’ তার এক ঘণ্টা পরে খবর আসে দুর্ঘটনার। পরে আমি ও আমার স্বামী গিয়ে আব্বার লাশ নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি। 

তিনি জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী ঢাকায় বসবাস করেন। দুর্ঘটনায় নিহত আব্বার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসার পরে স্থানীয় একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি শুনেছেন তাদের দুইটা গরু বিক্রি হয়েছে। আর একটা গরু বিক্রি করতে বাকি আছে। গরু বিক্রি হলে তার ভাই আরিফুল বাড়িতে ফিরবে। আর ভাই নিঃস্ব ও এতিম হইয়া গেল। 
আমেনা খাতুন বলেন, আমার বাপ একাই ছিল। আমার কোনো চাচা নেই। আরিফুলও একা হয়ে গেল। আমাদের আর কোনো অভিভাবক নেই। 

এ বিষয়ে বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার তঞ্জু মোল্লাহ বলেন- তিনি নদীতে মাছ ধরা ও কৃষি কাজ করেন। এছাড়া বাড়িতে গরু পালন করেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি ঢাকা গরু বিক্রি করতে নিয়ে যান। কয়েকদিন আগে গরু নিয়ে গিয়ে দুর্ঘটনায় কোহিনূর শেখ মারা যান। তার মরদেহ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বাবার লাশ দাফন করে আরিফুল আবার ঢাকায় গিয়েছে কোরবানির গরু বিক্রি করতে।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

Editor & Publisher: Md. Abdullah Al Mamun

Office: Airport haji camp

Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com

Developed by RL IT BD