পবিত্র হজ আজ, লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

আজ পবিত্র হজ। হাজিদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে এদিন মুখর হবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিদায় হজের স্মৃতিবিজড়িত আরাফাত ময়দান। শ্বেতশুভ্র পোশাকে আবৃত হাজিরা জাবালে রহমতের পাদদেশ ও মসজিদে নামিরার আশপাশে অবস্থান নিয়ে জীবনের পরম কাঙ্ক্ষিত হজ পালন করবেন। মূলত এ দিনটির জন্যই পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা।
সৌদি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ। ইয়াওমুল আরাফা বা আরাফার দিন। মক্কা নগরীর অদূরে জাবালে রহমত পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা সাদা-কালো-ধনী-গরিব নির্বিশেষে লাখ লাখ হাজি।
লাখো কণ্ঠে আরাফাতের ময়দানে আজ ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই। সব সাম্রাজ্যও তোমার। শুধু তোমার ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের জন্য আমরা এখানে সমবেত হয়েছি প্রভু।
জান্নাত থেকে বিতাড়িত বাবা আদম ও মা হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে দীর্ঘদিন একাকী ঘুরতে ঘুরতে এ আরাফাতের ময়দানে এসেই মিলিত হন। এখানে দোয়া পড়ার পর আল্লাহতায়ালা তাদের ক্ষমা করেন এবং দুজনের মিলন ঘটান। তাদের মিলনের স্মৃতি অম্লান করে রাখতেই পৃথিবীর মুসলমানদের এ মিলনমেলা প্রতি বছরই একবার করে দৃশ্যমান হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার স্ত্রী-পুত্রকে জনমানব ও খাদ্য-পানীয়বিহীন মরুপ্রান্তরে ছেড়ে যাওয়ার সময় দোয়া করেছিলেন। এ দোয়ার প্রতিফলন দেখা যায় পবিত্র হজে। সমগ্র বিশ্বের মুসলমানরা পাগলপারা হয়ে ছুটে আসেন সৌদি আরবের মক্কা নগরীর পানে। তাদের একটাই চাওয়া, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার ক্ষমা।
ধারাবাহিকভাবে ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে মূলত হজ পালন করতে হয়। গতকাল বুধবার হাজিরা মিনায় পৌঁছান। সেখান থেকে আজ মোয়াল্লিমরা গাড়িতে করে নিয়ে যাবেন আরাফাতে তাদের নির্ধারিত তাঁবুতে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন হাজিরা। এটাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, আল-হাজ্জু আরাফাহ। অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হচ্ছে হজ। এখানে হজযাত্রীদের ফজর ছাড়াও জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করতে হবে।
আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থানের মাধ্যমে হজ আদায় করবেন হাজিরা। সেখানে তারা আল্লাহর কাছে জীবনের সব গুনাহের ক্ষমা চাইবেন। এজন্য মোয়াল্লিমদের পক্ষ থেকে হাজিদের বিভিন্ন কর্নারে গিয়ে একা একা দোয়া করার আহ্বান জানানো হয়।
সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মাগরিব না আদায় করে হাজিদের যাত্রা শুরু হবে মুযদালিফার উদ্দেশে। সেখানে যাওয়া মাত্র মাগরিব ও এশা এক আজানে, দুই একামতে আদায় করবেন তারা। এরপর মুযদালিফায় মসজিদে মাশআরিল হারামের আশপাশে উন্মুক্ত আকাশের নিচে মাথা খোলা অবস্থায় রাত্রীযাপন করবেন তারা। পরের দিনগুলোতে জামারাতে নিক্ষেপের জন্য এখান থেকেই পাথর সংগ্রহ করেন হাজিরা। এজন্য বিশেষ ধরনের ছোট ছোট পাথর রাখা হয় মুযদালিফাজুড়ে।
১০ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর আবার মিনায় ফিরে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার আগে বড় জামারাতে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানি করার পর মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম পরিত্যাগ করবেন হাজিরা। সুযোগ বুঝে মক্কায় গিয়ে ফরজ তাওয়াফ করতে হবে তিন দিনের মধ্যে। ১১ ও ১২ জিলহজও হাজিদের সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর তিনটি জামারাতে সাতটি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। যারা সংক্ষেপ করতে চান তারা ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করবেন।
পরে মক্কায় ফিরে বিদায়ের দিন বিদায়ী তাওয়াফের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে প্রতি ওয়াক্তের নামাজ ও যত বেশি সম্ভব তাওয়াফে সময় কাটাবেন হাজিরা।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
Office: Airport haji camp
Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com
Developed by RL IT BD
মন্তব্য