অঞ্চলভেদে গরুর বৈচিত্র্য: কোরবানি হাটে চাহিদার শীর্ষে কোনটি?

৩১ মে ২০২৫, ৬:৪৪:৪৪

ফাইল ছবি

বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশের গবাদিপশু খাত দীর্ঘদিন ধরে জাত ও অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্যপূর্ণ থাকলেও ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বৈচিত্র্য আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়, যখন বিভিন্ন জেলার গরু তাদের গুণগত বৈশিষ্ট্যের কারণে কোরবানির হাটে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। বর্তমানে ক্রেতারা শুধু গরুর আকার নয়, বরং তার জাত, স্বাস্থ্য ও লালন-পালনের মান বিবেচনায় নিয়ে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা খাতটির জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ।

অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “গরুর জাতভেদে দেহের গঠন, গোশতের পরিমাণ এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় পার্থক্য রয়েছে। ক্রেতারা এখন এসব দিক বিবেচনা করে কোরবানির পশু বেছে নিচ্ছেন। ফলে জেলার বিশেষ জাতগুলোর প্রতি চাহিদাও বাড়ছে।”

এলাকাভেদে গরুর কোন কোন জাতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বিশেষজ্ঞ আজাদ বলেন, “বাংলাদেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ গরু কোরবানি হয় তার ৫০ শতাংশই থাকে ২০০-২৫০ কেজি ওজনের দেশীয় জাতের (নন-ডেসক্রিপটিভ) গরুগুলো, বাকি অংশগুলো আসে বিভিন্ন রিজিওনাল সোর্স থেকে। তাদের মধ্যে সবার প্রথমে থাকবে চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি জেলাভিত্তিক জনপ্রিয় জাত রেড চিটাগাং ক্যাটল (আরসিসি)। এ জাতের গরুগুলো লাল রঙের, মাঝারি আকৃতির ও শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন হয়। এ গরুগুলো চট্টগ্রামে খুবই জনপ্রিয় এবং একইসাথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর উচ্চ চাহিদা রয়েছে। কোরবানিতে সাধারণত ২০০-২৫০ কেজির গরুর চাহিদা বেশি থাকে বিধায় আরসিসির এতো জনপ্রিয়তা।”

অধ্যাপক আরো বলেন, “মাংসে (লিন মিট) চর্বির পরিমাণ কম এমন একটি গরুর জাত উন্নয়ন হয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলায়, যা মিরকাদিম গরু নামে পরিচিত। এ গরুগুলোর ওজন সাধারণত ২০০-৩০০ কেজির মধ্যেই হয়। লিন মিট কোয়ালিটির কারণে রাজধানীর পুরান ঢাকার মানুষের কাছে এটি অত্যধিক জনপ্রিয়। ডেইরি রিজিওন পাবনা জেলায় একটি গরুর জাত উন্নয়ন হয়েছে, যা পাবনা ক্যাটল নামে সুপরিচিত। মূলত দুধের জন্য জাতটি জনপ্রিয় হলেও এই জাতের ষাঁড়গুলো কোরবানির বাজারে খুবই জনপ্রিয়। এই জাতের অধিকাংশ গরুর রং সাদা হয়। সাদা মেশানো ছাই রঙয়েরও হয় এই গরু। এছাড়া লাল, ধূসর বা মিশ্র বর্ণেরও হয় পাবনা ক্যাটল। গড় ওজন হয়ে থাকে ৪৫০-৫০০ কেজি। এ জাতের গরুগুলো যারা এক্সিকিউটিভ লেভেলে আছেন, ব্যবসায়ী এবং যাদের ইনকাম বেশি তারাই পছন্দ করে থাকেন।”

“বগুড়ার কাহালু, সারিয়াকান্দিতে একটি গরুর জাত উন্নয়ন করা হয়েছে, যা নর্থ বেঙ্গল গ্রে (এনবিজি) নামে সুপরিচিত। এর গায়ের রং সাদা তবে গলার অংশটি কালো হয়। এ জাতের গরুগুলোর ওজন আরসিসির মতোই হয়ে থাকে। এর ওজন এবং রঙের কারণে গরুটির চাহিদা দেশব্যাপী অনেক বেশি। তবে দেশে সংকর জাতের গরুর চাহিদাও দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছেন ওই অধ্যাপক।”

মাংসের গুণাগুণের বিবেচনায় কোন জাত ভালো তা জানতে চাইলে ওই অধ্যাপক বলেন, “যে গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি ওই মাংসের কোয়ালিটি সবচেয়ে ভালো। সেই হিসেবে আমার মতে মাংসের গুনাগুন বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো জাত হচ্ছে পাবনা ক্যাটল। তবে যারা চর্বিমুক্ত মাংস পছন্দ করেন তাদের জন্য ভালো হবে মিরকাদিম গরু।”

দামের দিক থেকে কোন গরুর জাত বেশি উপযোগী- এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আজাদ বলেন, “কোরবানির গরু কেনার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর দাম। গ্রামীণ অঞ্চলের বাস্তবতা অনুযায়ী, অনেকেই ৭ জন মিলে একটি গরু কোরবানি দেন। সাধারণত প্রতিজন অংশীদার ১৫-১৬ হাজার টাকার মধ্যে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সেক্ষেত্রে একটি গরুর মোট দাম যে দাঁড়ায় ওই দামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো গরুর জাত হিসেবে আরসিসি (রেড চিটাগাং ক্যাটল) এবং নর্থ বেঙ্গল গ্রে (এনবিজি) গরুকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।”

অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, “গরুর জাতভেদে এই ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বাংলাদেশের গবাদিপশু খাতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। পরিকল্পিতভাবে এই খাতকে এগিয়ে নিতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে তা ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে আমি আশাবাদী।”

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য