রবিবার ৮ জুন, ২০২৫, ০৯:৪৯ অপরাহ্ণ

সৌদিতে ফ্ল্যাটে গাজীপুরের দুই ভাই খুন

২২ মে, ২০২৫ ১১:৫১:০৬
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে খুন হয়েছেন গাজীপুরের সহোদর দুই ভাই। সৌদি পুলিশ দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। গতকাল বুধবার (২১ মে) মধ্য রাতে তাদের হত্যাকাণ্ডের খবরে শোকের মাতম চলছে গাজীপুর মহানগরীর উত্তর ভুরুলিয়ার লম্বরি বাড়িতে।

খুন হওয়া কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২) উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কাকন একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরির খোঁজ করছিলেন। ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে জব ভিসায় কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন বাবা মোশারফ হোসেন লম্বরির কাছে। ৩ লাখ টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি। পরে বাহার উদ্দিন ভালো বেতনে ছোট ছেলে সাগরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সৌদি পাঠানোর প্রস্তাব দেন।

রাজি হলে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি যায় সাগর। কিন্তু কাজের পরিবর্তে তাকে দাম্মামে একটি ঘরে আটকে রেখে আরো ৪ লাখ টাকা দাবি করায় হয় বাবা মোশরফ হোসেনের কাছে। ছেলের কথা ভেবে আরো ৪ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। টাকা নিয়েও ছেলেকে ভালো চাকরি না দিয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ দেয়।

কানাডা পাঠানো জন্য নেওয়া ৩ লাখ টাকা ফেরত চাইলে বড় ছেলে কাকনসহ দুই ছেলেকে সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন। নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি নিয়ে যান বাহার। সেখানে কাজ না দিয়ে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানার পর বাহার উদ্দিন কাকান ও সাগরের বাবা মোশারফ হোসেনকে উমরা ভিসায় সৌদি গিয়ে ছেলেদের দেখে আসার প্রস্তাব দেন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাহার উদ্দিনের সাথে সৌদি আরব যান মোফারফ হোসেন।

এ সময় দুই ছেলেই জানান, তাদের খাবার ডেলিভারির কাজ দেওয়া হয়েছে। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। রাখা হয়েছে ছোট্ট ঘরে। ২২ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরেন। ছেলেদের কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে থেকে যান বাহার। আসার সময় বাহার একটি পলিথিন মোড়ানো একটি ব্যাগ দিয়ে ঢাকার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বলেন মোশারফ হোসেনকে। ব্যাগে কি ছিল তিনি দেখেননি। সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তল্লাশি করে একটি পুটলি উদ্ধার করে। পরে পুটলি রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। তিনি ফিরে আসার পরদিন বাহার উদ্দিন বাংলাদেশে চলে আসেন। এসেই ব্যাগে থাকা পুটিলি ফেরত চান। ইমিগ্রেশন পুলিশ রেখে দিয়েছে জানালে পুলিতে ১৩ লাখ টাকার সোনা ছিল দাবি করে টাকার জন্য চাপ দেন। কয়েক দফা হুমকি দেন। বলেন টাকা না দিলে সৌদিতে থাকা ছেলেদের ক্ষতি হবে। এসব ঘটনায় তিনি নগরীর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। সর্বশেষ ৯ মে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে একদল সন্ত্রাসী নিয়ে এসে অস্ত্র উচিয়ে মোশরারফকে খুঁজতে থাকেন। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোশরফরের বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেম লম্বরিকে তুলি নিয়ে যেতে থাকেন এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেন। ঘটনার সময় মোশরফ বাড়িতে ছিলেন না। ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে।

মোশারফ হোসেন বলেন, দুই ছেলে ছাড়া তার আর কোনো সন্তান নেই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাদের কানাডায় পাঠাতে চেয়ে ছিলেন। কানাডা পাঠানোর স্বপ্নই কাল হয়ে তার পরিবারের। বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলের হত্যাকাণ্ডের খবর দিয়েছে। পরে সৌদি দূতাবাসের মধ্যে জানতে পেরেছেন মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যটে প্রবেশ করে দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেয়। সিসি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশি এক যুবকে পুলিশ সনাক্ত করেছে। তাকে দিয়েই বাহার তার দুই সন্তানকে খুন করে থাকতে পারে ধারণে মোশারফ হোসেনের। তিনি দ্রুত সন্তানদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সাহায়তা কামনা করেন।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

Editor & Publisher: Md. Abdullah Al Mamun

Office: Airport haji camp

Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com

Developed by RL IT BD