রবিবার ৮ জুন, ২০২৫, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

গণ পিটুনির ভয়ে বাড়ি ছাড়া পরকিয়ার সালিশের নামে জিম্মি করে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর!

১০ এপ্রিল, ২০২৫ ৯:২৩:৪৯
প্রতীকী ছবি

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালীগঞ্জে পরকিয়া প্রেমের জেরে জাহাঙ্গীর (৪২) নামের এক প্রবাসীর স্ত্রী, রতন (২৬) নামের অন্য এক যুবকের সাথে চলে যাওয়ার ঘটনায় ভূক্তভোগী প্রবাসী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু স্থানীয় একটি দালালচক্র পরকিয়া প্রেমের ওই ঘটনাকে সামাজিকভাবে মিমাংসার কথা বলে তাদের জিম্মায় নিয়ে বিবাদী রতনকে জিম্মি করে প্রথমে তার কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু তিনি তা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় তা অর্ধেকে নামিয়ে ৫ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করে দালাল চক্র। সেই পরিমান টাকা দিতেও তিনি অপরাগতা প্রকাশ করায় সালিশে আড়াই লক্ষ টাকায় রফাদফা করে ওই চক্রটি। কিন্তু আড়াই লাখ টাকায় রফাদফা হলেও দরিদ্র বিবাদী রতনের কাছে নগদ কোন অর্থ না থাকায় বাবার কাছ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ৪ শতক জমি, টাকা দিতে না পারা পর্যন্ত ভোগদখল করার চুক্তিতে নন জুটিসিয়াল সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখা হয়। পরে এ ঘটনা জানা জানি হওয়ার ভয়ে বিবাদী রতনকে এলাকায় আসলে গণপিটুনি দেওয়া হবে বলে ভয় দেখিয়ে গ্রাম ছাড়া করেছে ওই দালাল চক্র।

ঘটনার বাদী ও বিবাদী উভয়ের বসবাস উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের ভূঁইয়াবো গ্রামের পাশাপাশি বাড়িতে। তারা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই। প্রবাসীর স্ত্রী (৩৫) তিন ৩ সন্তানের জননী হলেও অপর দিকে বিবাদী রতন অবিবাহিত।

অনুসন্ধানে উপজেলার ভূঁইয়াবো গ্রামে গিয়ে বিবাদীকে পাওয়া না গেলেও, কথা হয় বাদী প্রবাসী জাহাঙ্গীর ও তার মা-মা, এবং বিবাদী রতনের চাচা সাইজউদ্দিন ও মা রেহেনার সাথে। তারা জানান, গত ২৩ মার্চ সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন জাহাঙ্গীর। আগের দিন ২২ মার্চ তার স্ত্রী বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে প্রবাসী জাহাঙ্গীর দেশে ফিরে তিনি বাদী হয়ে তার স্ত্রীর ও মামাতো ভাই রতনের বিরুদ্ধে গত ৩ এপ্রিল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ৫ এপ্রিল থানা থেকে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মুহাম্মদ জহরুল ইসলাম ঘটনার তদন্তে যান। এএসআই পরদিন ৬ এপ্রিল বাদী-বিবাদী দুই পক্ষকে বিকেলে থানায় আসার কথা বলে চলে আসেন। কিন্তু ওই দিন বাদী গেলেও বিবাদী আসতে দেরি করায় অপেক্ষা করে এএসআই জহরুল ইসলাম জরুরী ডিউটিতে চলে যান।

বিবাদী রতনের মা রেহেনা কান্নাকাটি করে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, বাবা আমরা গরিব মানুষ, আমাদেরকে বাঁচান। আমার ছেলেকে জাকারিয়া তার অফিসে নিয়ে জিম্মি করে টাকা দাবি করে। কিন্তু আমরা গরীব মানুষ তাই টাকা-পয়সা নাই বিধায়, সে সাদা ষ্ট্যাম্পে আমার ছেলের স্বাক্ষর নিয়েছে এবং বলেছে আড়াই লাখ টাকা যত দিন দিতে না পারবে, তত তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া ৪ শতক জমি বাদীরা ভোগদখল করবে। এছাড়াও আমার ছেলে বাড়ী আসলে গণ পিটুনি দিয়ে মেরে ফেলায় হুমকিও দেওয়া হয়। এ কারণে বর্তমানে আমার ছেলে বাড়ী ছাড়া।

এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানান, দালাল চক্রের মূলহোতা জাকারিয়ার আল-মামুন। তিনি নিজেকে স্থানীয় একটি ভূঁইফোর সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এছাড়াও নিজেকে স্থানীয়ভাবে মস্তবড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বেড়ানো এই জাকারিয়ার আল-মামুন কালীগঞ্জ থানা গেইটের বিপরীতে ছোট্ট একটি টিনসেটের রুম নিয়ে করেছেন ভূঁইফোর সাংবাদিক সংগঠন। থানার ভেতরে ঘুরঘুর করা এই জাকারিয়া সবসময় অপেক্ষয় থাকে থানায় বিচার পেতে আসা ভূক্তভোগীদের জন্য। সুযোগ পেলেই ভূক্তভোগীদের প্রস্তাব দেন থানায় না গিয়ে তার অফিসে এসে সমস্যা সমাধান করতে। সবসময় সফল না হলেও মাঝে মধ্যে তার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারায় ভূক্তভোগীরা।

এ ব্যাপারে জাকারিয়ার আল-মামুন তার ব্যাপারে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার অফিসে কোন সালিশ করিনি। তবে বাদী বিবাদী আমার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় অফিসে চা খাওয়ার দাওয়াত দেই। পরে তারা আমার অফিসে যায় এবং তাদের চা আপ্যায়ন করি। অপরদিকে, প্রবাসী জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই সাত্তার জানান, জাকারিয়া আল-মামুনের অফিসে সালিশ করে স্বাক্ষীসহ বিবাদী রতনের স্বাক্ষরিত সাদা ষ্ট্যাম্প দুই দিন তার কাছে রেখে আমাদের কাছে দিয়ে গেছে।

ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মুহাম্মদ জহরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন আমি বাদী-বিবাদী দুই পক্ষকে থানায় আসতে বললেও বিবাদী পক্ষ দেরি করায় আমি তাদের জন্য অপেক্ষা করে জরুরী ডিউটিতে চলে যাই। তবে এ সময় বাদীদের মধ্যে কেউ একজন বিষয়টি সামাজিকভাবে মিমাংসার কথা বলেন। পরে আমি সেটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছি, আপনারা সামাজিকভাবে মিমাংসা করে আপোষনামা ও অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদন থানার ডিউটি অফিসারকে দিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই। কিন্তু এর পরে আমি কিছু জানি না। তারা কোথায়? কার এখানে কিভাবে মিমাংসা করেছেন।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

Editor & Publisher: Md. Abdullah Al Mamun

Office: Airport haji camp

Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com

Developed by RL IT BD