প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলন অনিহা ও অনিয়ম

২৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৫:৪০

ছবি: প্রতিনিধি, সংবাদ বেলা

আবিদ হাসান, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ: বাংলাদেশের সংবিধান এবং জাতীয় পতাকা আইন ১৯৭২ অনুসারে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। জাতীয় পতাকা সংক্রান্ত বিভিন্ন নিয়মাবলী অনুযায়ী, পতাকা উত্তোলন এবং তার সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো অবমাননা করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে পারে।

২৬ শে মার্চ এই দিনে দেশবাসী একত্রিত হয় এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের স্মৃতিকে স্মরণ করে। এটি একটি ঐতিহাসিক দিন, যেখানে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের জন্য সংগ্রাম করেছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল, যার ফলে হাজার হাজার শহীদ আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। পতাকা উড়ানোর ক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা ৮ এর ১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘মোটর গাড়ি, নৌযান এবং উড়োজাহাজ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ‘পতাকা’ উত্তোলিত থাকিবে।

বিধিমালা এবং আইন থাকলেও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জাতীয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের চিত্র অবহেলা করতে দেখা গেছে। তাছারা বেশ কয়েকটি সরকারি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে দায় এড়াতে ফটোসেশন করেই জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার খবর পাওয়া গেছে। জাতীয় এই দিনে জাতীয় পতাকার এমন অব মুল্যায়নে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেকেই।

সরেজমিনে, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পতাকা উত্তোলন করতে দেখা যায়নি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে, গেটে তালা মারা অবস্থা দেখা যায়। একই সাথে দুপপুরের পর পর্যন্ত পতাকা উত্তোলন করা হয়নি উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ে। এছারাও উপজেলা চত্বরের অতি নিকটেই (প্রপারেই) প্রায় শতাধিকের মত হোটেল, দোকান,গ্যারেজ থাকলেও মাত্র ১টি কাঠ মিস্ত্রীর দোকানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে দেখা গেছে। পাটগ্রাম মোড়েও ঠিক একই চিত্র। আন্ধারমানিক ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ও পতাকা উত্তোলন চোখে পরেনি কারো।

আন্ধারমানিক বাজারে শতাধিকের উপর দোকান থাকলেও ১০/১২ টির বেশি পতাকা উত্তোলন করা হয়নি, তাছারা ১ টি বাজারে মাত্র ১ টি পতাকা উত্তোলন হয়েছে, বাহিরচর বাজারে প্রায় ৪০ টির মত দোকান থাকলেও মাত্র একটি হোটেলে ছারা অন্য দোকানগুলোতে পতাকা উত্তোলন করতে দেখা যায়নি। লেছড়াগঞ্জ বাজারের চিত্র ঠিক একই রকমের চিত্র, দুই শতাধিকের উপর দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও হাতেগোনা ৩০/৩৫ টি দোকানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার চিত্র দেখা গেছে। দিয়াবাড়ি বাজারে শতাধিকের উপর দোকান থাকলেও জহিরুল স্টোরের মুদি দোকানসহ মাত্র দুইটি দোকানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে দেখা গেছে। চালা তিন রাস্তার মোড়ে প্রায় ৫০ টির মত দোকানের মাত্র ১ টিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন দেখা গেছে দুপুর ২ টার দিকে। কালই মোড়ে ২০/২৫টির মধ্যে ১ টি দোকানে দুপুরের পর পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলন দেখা গেছে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয়নি ঝিটকা বাজার শহীদ মিনারে। এছারা ঝিটকা বাজার শহীদ মিনারে শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদীদল ও অঙ্গ সংগঠন এবং সামাজিক সংগঠন সম্মিলিত প্রয়াস ছারা অন্য কোন ফুলের ডানা দেয়া হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেকেই। ঝিটকা বাজারে প্রায় দুই হাজারের বেশি দোকান থাকলেও প্রায় শতাধিক দোকানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয়েছে। আর ঝিটকা বাজারে দুএকটি প্রতিষ্ঠান ছারা প্রাইভেট ক্লিনিক,হাসপাতাল,ব্যাংক পিএলসি শাখা, এনজিও ক্লিনিক,হাসপাতালের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয়নি। অন্যান্য বাজারে মত একই অবস্থা কান্ঠাপাড়া ও বলড়া বাজারের চিত্র।

জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয়নি বাহিরচর কমিউনিটি ক্লিনিক,গোপিনাথপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, মধ্য ধুসুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক,পূর্ব সাকুচিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক,যাত্রাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, দড়িকান্দি সারোয়ার হোসেন হাফেজিয়া মাদ্রাসা, সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১নং সোনাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছিলো কি না, প্রত্যক্ষদর্শী কেউ বলতে পারবে না। সকাল থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত ৪০ নং সুতালড়ী-কোদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন চোখে পড়েনি আশপাশের প্রতিবেশিদের। আর উপজেলার চরাঞ্চলে স্কুল,ক্লিনিক, বাজারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জাতীয় পতাকার এমন অবমাননায় হতাশ অনেকেই।

জাতীয় দিবসে জাতীয় পতাকার এমন অবমাননা আর অনিহা দেখে ক্ষোভ জানিয়ে সম্মিলিত প্রয়াসের সভাপতি ইলিয়াস মোর্শেদ টিপু বলেন, আমার ঝিটকা এলাকাতেই জাতীয় দিবসে জাতীয় পতাকার এমন অবহেলা আর অবমাননা আমাদের বাঙালী জাতীর জন্য লজ্জাস্কর। দেশপ্রেম কোথায় আমাদের, আমি এর নিন্দা জানাই। ভবিশ্যতে এমনটি যেন আর না হয়, সেদিকে সবাই সজাগ থাকতে হবে।

হরিরামপুর উপজেলা বিএনপি সভাপতি হান্নান মৃধা বলেন, জাতীয় দিবসে অবশ্যই জাতীয় পতাকা কে সন্মান দেখাতে হবে। অনেক কষ্টে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে। এই দিনে যদি কেউ জাতীয় পতাকাকে অবমান করে, তবে অবশ্যই সে অপরাধী। ভবিশ্যতে এমনটি যেন আর না হয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল করার অনুরোধ জানাই।

হরিরামপুর নির্বাহী অফিসার কোহিনুর আক্তার বলেন, সকলের জাতীয় পতাকাকে সন্মান দেখানো উচিত। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় দিবসে অবশ্যই জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারা পালনও করবে। তাছারা এটা দেশ প্রেমের ও একটা বিষয়।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য