বাংলাদেশে কর্মীর বাড়িতে ৪ কোটি টাকার মসজিদ বানালেন সৌদি নাগরিক
সংগৃহীত ছবি
গ্রামের জরাজীর্ণ এক মসজিদ নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা সৌদি প্রবাসী মোক্তার ঢালীকে ফান্ডে কিছু টাকা দান করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু মসজিদ ফান্ডে বেশি টাকা দান করার ইচ্ছা থেকে বিষয়টি তিনি তার সৌদি মালিককে জানান। সৌদির সেই ধনকুবের চার কোটি টাকা ব্যয় করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জরাজীর্ণ ওই মসজিদটিকে দৃষ্টিনন্দন করে নির্মাণ করে দিয়েছেন। এমনকি সৌদি থেকে এসে সন্তানদের নিয়ে ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে গেছেন তিনি।
সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার কুলকুড়ি নামক গ্রামের কবিরাজ বাড়ি জামে মসজিদে। গ্রামের মসজিদ নির্মাণের জন্য সৌদি মালিককে বলেছিলেন কুলকুড়ি গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোক্তার ঢালী। মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়া সৌদির ওই নাগরিকের নাম শেখ হামুদ আলী আল খালাফ। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সৌদি নাগরিক শেখ হামুদ আলী আল খালাফের অধীনে কাজ করে আসছিলেন বাংলাদেশি কর্মী মোক্তার ঢালী (৪০)। তার কর্মনিষ্ঠা ও সততায় মুগ্ধ মালিকও।
এমন বিশ্বস্ততার প্রতিদান হিসেবে বাংলাদেশে কর্মীর নিজ বাড়িতে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে দিলেন দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। এমনকি সেই মসজিদে এসে মুসল্লিদের সঙ্গে নামাজও আদায় করেছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুলকুড়ি এলাকায় মৃত জমসেদ ঢালীর ছেলে মোক্তার ঢালী। তার বয়স যখন ২০ বছর তখন পারিবারিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সৌদি আরবে চলে যান তিনি।
সেখানে জেদ্দা শহরের ধনকুবের শেখ হামুদ আলী আল খালাফ নামের এক ব্যক্তির অধীনে দোকান দেখাশোনার কাজ করতেন। দীর্ঘদিনের কর্মজীবনে মালিকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে মোক্তারের। কাজের ফাঁকে একদিন মালিককে তাদের নিজবাড়ির ভাঙা মসজিদটিকে নতুন করে নির্মাণ করে দিতে বলেন।
মালিকও মোক্তারের কথায় না করেননি। প্রস্তাবে রাজি হয়ে অন্তত ৪ কোটি টাকা খরচ করে দেড় বছর সময়ে কুলকুড়ি কবিরাজ বাড়ি জামে মসজিদটি নির্মাণ করে দেন।
মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে গত শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সৌদি এয়ারলাইনসের একটি বিমানে চার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন সৌদি নাগরিক শেখ হামুদ আলী আল খালাফ। পরে বিমানবন্দর থেকে তিনটি গাড়ি নিয়ে শরীয়তপুরের ডামুড্যায় আসেন। এ সময় তিনি কুলকুড়ি এলাকায় পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এলাকাবাসী। নিজের টাকায় নির্মিত মসজিদ দেখে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন খালাফ ও তার পরিবার।
খালাফের আগমন উপলক্ষে কুলকুড়ি এলাকায় এদিন উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। তাদেরকে এক নজর দেখতে ভিড় করেন শিশু, বৃদ্ধ ও নারীসহ সকল বয়সের মানুষ।
কর্মী মোক্তার ঢালী বলেন, আমরা সত্যিই অনেক আনন্দিত। আমার মালিক অনেক বেশি আন্তরিক এবং কর্মীবান্ধব। আমি মসজিদের কথা বলার পরই রাজি হয়ে যান। সবাই আমার মালিকের জন্য দোয়া রাখবেন। তিনি যেন দীর্ঘজীবী হন।
সৌদি নাগরিক শেখ হামুদ আলী আল খালাফ বলেন, বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণ করতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আমি এ মসজিটি নিজের চোখে দেখার জন্য আমার চার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। সবার সঙ্গে জুম্মার নামাজ আদায় করলাম।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষ অনেক বেশি আন্তরিক। মসজিদটি অনেক সুন্দর হয়েছে। আমি আগামীতে এরকম সুন্দর আরও মসজিদ নির্মাণ করবো ইনশাআল্লাহ।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য