প্রচ্ছদ / ক্যাম্পাস / বিস্তারিত

উদ্যোক্তা তৈরি না হলে প্রযুক্তির প্রসার থাকবে সীমিত

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৭:২৫

ছবি: প্রতিনিধি, সংবাদবেলা

বাকৃবি থেকে: বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিনিধি ড. জিয়াওকুন শি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেই প্রযুক্তিগুলো কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ সংস্থা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টা আরও কার্যকর হতে পারে, যদি আমরা প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোক্তা বিকাশের ওপর জোর দিই। কারণ উদ্যোক্তা তৈরি না হলে প্রযুক্তির প্রসার সীমিত থাকবে।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ‘আধুনিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও জীবাশ্মসম্পদের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে চতুর্থ কৃষি বিপ্লব বাস্তবায়ন করা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশে প্রথমবারের মতো ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি অ্যান্ড বায়ো রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি ওই কথা বলেন।

ড. জিয়াওকুন শি আরো জানান, ‘এফএও বর্তমানে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রকে টেকনোলজি এন্ট্রিপ্রেনিউরশিপ বিকাশে সহায়তা করছে, যাতে প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হয়।’

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি অ্যান্ড বায়ো রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসএএমবিই) এবং বাকৃবির কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের যৌথভাবে আয়োজিত দুদিন ব্যাপী (১২-১৩ ফেব্রুয়ারি) ওই সম্মেলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষিকে স্মার্ট কৃষিতে রূপান্তরের পাশাপাশি লাভজনক কৃষি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ।

সম্মেলনের আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।

এছাড়াও গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিনিধি ড. জিয়াওকুন শি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আখন্দ, এসিআই মোটরস লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) জনাব সুব্রত রঞ্জন দাস। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, জাপান, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ২৪০ জন বিজ্ঞানী, কৃষি প্রকৌশলী, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা, কৃষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীও এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক সম্মেলনটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিক-ই-রব্বানী।

এসময় বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা এখন যান্ত্রিকীকরণের যুগে প্রবেশ করেছি। উন্নত দেশগুলো অনেক আগেই এ পথে এগিয়েছে, আর বাংলাদেশও সেই বিশ্বব্যাপী প্রবণতাকে অনুসরণ করছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শুধু সুযোগ নয়, বরং একান্ত প্রয়োজনীয়। এটি উৎপাদনকে কার্যকর ও লাভজনক করার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি নিশ্চিত করবে। ফসল উৎপাদন, প্রাণিসম্পদ, গ্রামীণ উন্নয়ন ও মৎস্য খাতেও যান্ত্রিকীকরণ অপরিহার্য, এতে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে দ্রুত ফলন বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি গ্রহণ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা বাস্তবায়নে কাজ করছে। স্মার্ট কৃষি, বিকল্প জ্বালানি ও ফসল পরবর্তী প্রযুক্তির প্রসারে গবেষণা ও শিল্পখাতের সংযোগ নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব অপরিহার্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘কৃষিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির প্রসারে এই সম্মেলন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিজ্ঞানী ও শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞদের সমাবেশ সত্যিই প্রশংসনীয়। বিশ্ব এখন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে শিল্প বিপ্লবের নতুন প্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও টেকসই কৃষির জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনে বিশ্বনেতৃত্বেও রয়েছে, তাছাড়া খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার পাশাপাশি বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহেও ভূমিকা রাখছে।’

এছাড়া সম্মেলনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলিপ্যাডে একটি কৃষি যন্ত্রপাতি মেলার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে দেশের স্বনামধন্য আটটি প্রতিষ্ঠান (সরকারি ও বেসরকারি) তাদের কৃষিবিষয়ক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তিগুলো প্রদর্শন করবে। মেলায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোও প্রদর্শন করা হয়।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য