প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

১২০ মণ সবজি দিয়ে তৈরি হলো খিচুড়ি, অংশ নেয় কয়েক হাজার মানুষ

২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৭:০৯

ছবি: সংগৃহীত

এবার ১০৫ মণ বিভিন্ন ধরনের সবজি, ১২ মণ চাল এবং ৩ মণ ডাল মিলিয়ে রান্না করা হলো ১২০ মণ সবজি খিচুড়ি। ছয়টি মহল্লার কয়েক হাজার মানুষ এই খিচুড়ি খাওয়ার উৎসবে অংশ নেন। পাবনার বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লায় ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়। এক পর্যায়ে মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল এই উৎসবটি।

জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সবজি খিচুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়। বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া, দাসপাড়া, কর্মকারপাড়া, শেখপাড়া, শাহপাড়া ও হাতিগাড়া মহল্লার অন্তত ছয় হাজার নারী-পুরুষ রাত আটটা থেকে ১২টা পর্যন্ত খাওয়ায় অংশ নেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেড়া পৌর সদরের ‘দক্ষিণপাড়া যুবসমাজ’ এর উদ্যোগে ১১ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে এই ‘খিচুড়ি উৎসব’। সুবিধা মতো বছরের কোনো একটি দিনকে মহল্লার ছোট থেকে শুরু করে মুরুব্বিরা মিলে উৎসবের জন্য বেছে নেন। তবে শীতের মধ্যে অল্প দামে নানা রকম সবজি পাওয়া যায় বলে শীত মৌসুমেরই কোনো একটি দিনকে সবার সম্মতিতে ‘সবজি খিচুড়ি উৎসব’ হিসাবে বেছে নেয়া হয়। এবার সবাই মিলে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দিনটিকে সবজি খিচুড়ি উৎসবের দিন হিসেবে বেছে নেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১৫ সালে বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার ১০ থেকে ১২ জন যুবক এ খিচুড়ি উৎসবের শুরু করেন। ওই বছর সবজি খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হয় মহল্লার শতাধিক নারী-পুরুষকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আয়োজনের পরিধি প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে। এক সময় এই আয়োজনের সঙ্গে শুধু দক্ষিপাড়া মহল্লার যুবকরা জড়িত থাকলেও এখন দলমত ও ধর্ম-বর্ণ মিলিয়ে আশেপাশের ছয়টি মহল্লার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এবারের সবজি খিচুড়ি উৎসব দক্ষিণপাড়া মহল্লায় অনুষ্ঠিত হলেও এতে অংশ নেন দাসপাড়া, কর্মকারপাড়া, শাহপাড়া, শেখপাড়া ও হাতিগাড়া মহল্লার প্রায় ছয় হাজার নারী-পুরুষ।

আয়োজকরা জানান, শুক্রবার ভোরে তারা সবজি বিক্রির হাটগুলো থেকে প্রায় ১০৫ মণ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি কেনেন। এসব সবজির মধ্যে ছিল আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, সিম, টমেটো, গাজর, মুলা, কাঁচা মরিচ, বেগুন, শালগম, বরবটিসহ আরও কয়েক রকমের সবজি। সবজি কিনে আনার পর দক্ষিপাড়া, দাসপাড়া ও কর্মকারপাড়া মহল্লার অন্তত ২৫টি বাড়িতে সেগুলো কাটা, বাছা ও ধোয়ার জন্য দেয়া হয়। সকাল থেকেই মহল্লার বিভিন্ন বয়সী নারীরা দলবেঁধে ওইসব বাড়িতে জড়ো হয়ে সবজি কাটায় অংশ নেন।

জানা গেছে, চার থেকে ৫ শ নারী অন্তত ২৫টি দলে ভাগ হয়ে ১০৫ মণ সবজি দুপুরের মধ্যে কাটা, বাছা ও ধোয়ার কাজ শেষ করেন।

এরপর দক্ষিণপাড়া মহল্লার সবচেয়ে বড় ফাঁকা জায়গায় রান্না করার জন্য বসানো হয় ১০টি অস্থায়ী চুলা। এর পাশেই তৈরি করা হয় প্যান্ডেল। কাটা সবজি সাজিয়ে রাখার জন্য একের পর এক টেবিল জোড়া দিয়ে বানানো হয় বিশাল আকারের টেবিল। বিকেল চারটা থেকে ১০টি চুলায় ১০টি ডেগ বসিয়ে শুরু হয় সবজি খিচুড়ি রান্না। রান্নায় ১০৫ মণ সবজির সঙ্গে যোগ করা হয় ১২ মণ চাল ও ৩ মণ ডাল। তিন দফায় এই রান্না শেষ হয়। তবে প্রথম দফা রান্না শেষে হওয়ার পরে রাত আটটা থেকেই শুরু হয় খাওয়া-দাওয়া। পরে আরও দুদফা রান্না চলে। রাত আটটা থেকে শুরু করে ১২ টা পর্যন্ত দক্ষিণপাড়াসহ ছয়টি মহল্লার অন্তত ছয় হাজার নারী-পুরুষ সবজি খিচুড়ি খাওয়ায় অংশ নেন।

এদিকে উৎসবটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হওয়ায় অনুষ্ঠানে সবজি, চাল, ডালসহ অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ হয়ে যায় খুব সহজেই। দক্ষিণপাড়া, দাসপাড়া ও কর্মকার পাড়াসহ কয়েকটি মহল্লার লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবজি, তেল, চাল, ডাল দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার অর্থ দিয়েও সহায়তা করেন।

উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা দক্ষিণপাড়া মহল্লার ফজলুর রহমান জানান, এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতার বন্ধন দৃঢ় করা। দক্ষিণপাড়াসহ আশেপাশের কয়েক মহল্লার মানুষ সারাবছর ধরে এই সবজি খিচুড়ি উৎসবের জন্য অপেক্ষা করেন।

দক্ষিণপাড়া মহল্লার জুয়েল মোল্লা সাভারের একটি টেক্সটাইল কারখানায় চাকরি করেন। সেখানে তার ভাই, বোনসহ আরও কয়েকজন আত্মীয় বাস করেন। জুয়েল মোল্লা বলেন, ‘খিচুড়ি উৎসবের জন্য আমাদের পরিবারের সবাই সারা বছরজুড়ে অপেক্ষা করি। এই খিচুড়ি উৎসবকে সামনে রেখে আমার ভাই, বোনসহ পরিবারের ১২ জন বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে গ্রামের বাড়িতে আসি। এছাড়া আমার অনেক বন্ধুও এই উৎসবকে সামনে রেখে গ্রামে এসেছে। খিচুড়ি খাওয়া বড় ব্যাপার না, কিন্তু এই উৎসবের মাধ্যমে গ্রামের সবার সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়াটা অনেক ভালোলাগার একটি বিষয়।’

উদ্যোক্তা দক্ষিণপাড়া মহল্লার ফজলুর রহমান বলেন, ‘এই উৎসবটি কয়েক মহল্লার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও মিলনমেলার সৃষ্টি করেছে। গত তিন-চারদিন ধরে মহল্লায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আছে। আমাদের মহল্লাসহ আশেপাশের কয়েকটি মহল্লায় অন্তত এক হাজার নারী-পুরুষ এই উৎসবকে ঘিরে দূরদূরান্ত থেকে বেড়াতে এসেছেন।’

দক্ষিণপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ও মনজুর কাদের মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘খিচুড়ি উৎসব এখন এ এলাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। দক্ষিণপাড়া মহল্লার তরুণেরা এই উৎসবে মূল ভূমিকা পালন করলেও আশেপাশের মহল্লাগুলোর সর্বস্তরের মানুষ এতে সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। এই উৎসব অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে গেলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বন্ধন দৃঢ় হবে। কমে আসবে হিংসা বিদ্বেষ।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মন্তব্য