মঙ্গলবার ৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:৫৪ অপরাহ্ণ
 

বাকৃবির সোহরাওয়ার্দী হলে গেস্টরুম আতঙ্ক: বহিষ্কৃত ২৮

১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১:১৫:১০
ছবি: প্রতিনিধি, সংবাদ বেলা

বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে নবীন শিক্ষার্থীদের গেস্টরুম করানোর অভিযোগে ২৮ জন শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান মোল্যা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিনেন্স অনুযায়ী হলে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তাদের বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ওই হলের লেভেল-১, সেমিস্টার-২, লেভেল-২, সেমিস্টার-২ এবং মাস্টার্সের একজন শিক্ষার্থী রয়েছে। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন গতকাল মধ্যরাতে (১২ জানুয়ারি) হলে গিয়ে গেস্টরুম করানোর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে এবং তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

শনিবার রাত ৯ টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে গত শনিবার রাতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের রিডিং রুমে ডেকে নিয়ে মোবাইল রেখে আসতে বাধ্য করা হয় এবং তল্লাশি করা হয়। এরপর তাদের সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ, দ্বিতীয় তলায় ওঠা নিষেধ, সিনিয়রদের সালাম, পরিচয় ও হ্যান্ডশেক করতে হবে, হলে লুঙ্গি পরা যাবে না এবং ক্যান্টিন বা গ্রন্থাগারে নির্দিষ্ট কিছু কার্যক্রম নিষিদ্ধসহ নানা নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়। পরে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা নবীনদের সমস্যার কথা শুনলেও তাদের চলে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা নবীনদের গালিগালাজ করে এবং সিনিয়রদের কাছে সমস্যা জানানোকে ‘অপরাধ’ বলে অপমান করে।

এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ছোটখাটো ভুলের (যেমন—হাত সোজা না রাখা, মাথার অবস্থান ঠিক না রাখা) অজুহাতে নবীনদের একজন একজন করে ডেকে অপমান করা হয়। বিভিন্ন উদ্ভট শাস্তি দেওয়া হয়, যেমন—১০ ধরনের হাসি দেওয়া, ১০ ধরনের সালাম করা, গাছে ঝুলে থাকার অভিনয় করা এবং নাচতে বাধ্য করা।

এসব মানসিক চাপ ও অপমানজনক আচরণের ফলে এক নবীন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যায়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। এই ‘গেস্টরুম’ কার্যক্রম শেষ হয় রাত সাড়ে ১২টায়। পুরো ঘটনার পর নবীন শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক বজলুর রহমান মোল্যা বলেন, ‘অভিযুক্তরা গত ১১ জানুয়ারি রাতে গোপনে নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রদের র‍্যাগিং করেছে। পরবর্তীতে তথ্যের ভিত্তিতে ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা তাদের শনাক্ত করেছি।’

তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলগুলোর প্রভোস্ট, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সের ৭ নম্বর ধারা মোতাবেক হল থেকে তাদের ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।’

‘সোহরাওয়ার্দী হলের ২৮ জন ও ননঅ্যাটাচ ২৫ জন অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়েছে। এরইমধ্যে সোহরাওয়ার্দী হলের অ্যাটাচ ২৮ জনের মধ্যে যাদের হলে পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। ননঅ্যাটাচদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরো যোগ করেন।

বাকৃবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘র‍্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে বাকৃবি প্রশাসন সর্বদা বদ্ধপরিকর। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থীরা সর্বপ্রথম গত ১১ জানুয়ারি রাতে নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর র‍্যাগিং করে। এর ফলে এক শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। হল প্রভোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও ব্যবস্থা নেবে।’

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

Editor & Publisher: Md. Abdullah Al Mamun

Office: Airport haji camp

Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com

Developed by RL IT BD