লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লেন খালেদা জিয়া
ফাইল ছবি
উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যায়।
এর আগে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে তার গাড়িবহরটি বিমানবন্দরে প্রবেশ করে। খালেদা জিয়ার ইমিগ্রেশন বিশেষ প্রক্রিয়ায় আগেই সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে বিমানবন্দরে দেরিতে পৌঁছানোয় খালেদা জিয়ার ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি।
এর আগে, মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে গুলশানের নিজ বাসভবন ফিরোজা থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বের হয়। এ সময় তাকে বিদায় জানাতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে বিমানবন্দর সড়কে। হাজারো নেতাকর্মী পথে পথে জড়ো হন। এর ফলে গাড়িবহরের গতি মন্থর হয়ে যায়। এ সময় সড়কে প্রবল যানজটও তৈরি হতে দেখা যায়। ফলে প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিমানবন্দরে প্রবেশ করে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর।
বাংলাদেশ সময় বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি অবতরণ করবে। সেখানে ‘ভিআইপি প্রটোকল’ পাবেন তিনি। বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, লন্ডন ক্লিনিক বলে একটা পুরনো ঐতিহ্যবাহী হাসপাতাল আছে। সেই হাসপাতালে এটি এনএইচএস-এর অধীন একটি হাসপাতাল। সেখানে তাকে (খালেদা জিয়া) ভর্তি করা হবে। হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে তাকে সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এই হাসপাতালেই তিনি চিকিৎসাধীন থাকবেন।
খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গী হচ্ছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চারজন চিকিৎসক ও প্যারা মেডিক্সরা থাকবেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ৬ জন সদস্য এই বিমানে যাবেন। তারা হলেন- অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।
সফর সঙ্গী হিসেবে খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান রয়েছেন। দলীয় নেতাদের মধ্যে আছেন তার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় যান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে ফিরোজায় যান তিনি। চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে ফিরোজা থেকে বেরিয়ে যান মির্জা ফখরুল।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি সভাপতি আমিনুল হক, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য সবশেষ লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর দেশে ফিরে একাধিক দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের শুরু থেকেই কারান্তরীন হন তিনি।
দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর থেকে ৬ মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেত্রীর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল সরকার।
এমন অবস্থায় গত ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর গত ২১ আগস্ট এভারকেয়ার হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসাধীন থেকে বাসায় ফেরেন তিনি।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য