রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ছাড়া মিয়ানমারে শান্তি আসবে না
ছবি: সংগৃহীত
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ছাড়া মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল (শুক্রবার) ব্যাংককে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়ামপোংসার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত মিয়ানমার সংক্রান্ত অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ সভার সাইডলাইনে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে মিলিত হন। পরামর্শ সভায় বাংলাদেশ, চীন, ভারত, লাও পিডিআর, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
তৌহিদ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বিস্তৃত রোডম্যাপের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য পরিস্থিতি ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়া রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পর রাখাইন রাজ্যে আসিয়ান সদস্য দেশগুলো তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য তাদের কর্মসংস্থান ও জীবিকা সহায়তা প্রদানে অন্যান্য বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে তালিকাভুক্ত করারও আহ্বান জানান তিনি।
তৌহিদ বলেন, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর রোহিঙ্গা সংকট ইতোমধ্যেই মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এবং বেশি দিন চলতে দিলে এটি আরও প্রকট হবে।’
থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং গঠনমূলক আলোচনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তারা অকপট ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে মতামত ও পরামর্শ আদান-প্রদানের জন্য এ ধরনের অনানুষ্ঠানিক সংলাপের গুরুত্ব স্বীকার করেন।
তারা বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত পোষণ করেন যে বিদ্যমান ব্যবধান কমাতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনের জন্য মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।
থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের চাহিদা অনুযায়ী রেঙ্গুন ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে উপকূলীয় শিপিং ব্যবস্থা চালু করতে বাংলাদেশের সমর্থন কামনা করেন।
থাই মন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে মৎস্য খাতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।তিনি বিমসটেক অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখতে থাইল্যান্ডের প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে থাইল্যান্ডের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের বরাত দিয়ে উপদেষ্টা তৌহিদ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি নাগরিকদের ব্যয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা পদ্ধতি আরও সহজীকরণের পথ খুঁজে বের করতে থাই কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।
সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা সুবিধা ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪-এ কার্যকর রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
থাইল্যান্ড কর্তৃক ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ই-ভিসা সুবিধা চালুর সিদ্ধান্ত স্বীকার করেন তারা।
এদিকে একই দিনে অন্য এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা তৌহিদ থাই রেড ক্রস সোসাইটির মহাসচিব রাষ্ট্রদূত তেজ বুন্নাগের কাছে বাংলাদেশি প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে শীতবস্ত্র এবং শুকনো খাবারের একটি চালান হস্তান্তর করেন।
রাষ্ট্রদূত বুন্নাগ এ অনুদানের জন্য বাংলাদেশের উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যাকবলিত উত্তরাঞ্চলের জনগণের কাছে এগুলো পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন।তারা রোহিঙ্গা, মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ কিছু প্রাসঙ্গিক আঞ্চলিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।
মহাসচিব বুন্নাগ বিজয় দিবস-২০২৪ উপলক্ষে এ মাসে স্বেচ্ছায় রক্তদান অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান।
তিন দিনের ব্যাংকক সফরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস এবং জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৪ পালন উপলক্ষে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাত ও মতবিনিময় করেন।
তিনি ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শনের মাধ্যমে এই সফরের সূচনা করেন এবং থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে কনস্যুলার এবং কল্যাণমূলক বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য