দেশে প্রথম গোলাকার রঙিন মূলা উৎপাদনে সফল বাকৃবি অধ্যাপক
বাকৃবি প্রতিনিধি: মুলা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি শীতকালীন মূলজাতীয় সবজি। তবে আমাদের দেশে সাধারণত মূলার সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। দেশের মানুষ মুলার রূপান্তরিত মূল এবং পাতা দুটোই খেয়ে থাকে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা যে মুলা নিয়ে গবেষণা করেছি সেটি রঙিন বর্ণের। এখানে বেগুনি, লাল, গোলাপী, লাল-সাদা মিক্সচার কালারের জাত রয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত লম্বা আকৃতির মূলা পাওয়া গেলেও দেশে প্রথমবারের মতো ৮টি রঙিন গোলাকার ও ডিম্বাকৃতির জাত ও ৬টি রঙিন লম্বা বিদেশী জাত এবং ৩টি দেশী জাতসহ মোট ১৭টি দেশী ও বিদেশী রঙিন জাতের মূলা নিয়ে গবেষণা করছি।’
অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ গবেষণাটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ‘বিদেশে বিশেষ করে আমেরিকা, ইউরোপ, ব্রিটেন ও জাপানে রঙিন গোলাকার মুলাকে সাধারণত ‘সালাদ মুলা’ হিসেবে খাওয়া হয়। তবে মূলত আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এবং মাটিতে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই রঙিন জাতের মুলাগুলো সঠিকভাবে চাষাবাদ করা যায় কিনা তা জানার জন্যই আমাদের এই পরীক্ষামূলক গবেষণা।’
গবেষক দাবি করেন, ‘বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুলা সবজি হিসেবে রান্না করে খায়। তবে কেউ কেউ মুলার ঝাঁজ এবং হালকা গন্ধের জন্য কাচা খেতে পছন্দ করে না। তবে গোলাকার রঙিন মুলায় হালকা ঝাঁজ থাকলেও কাঁচা খেলে মুখে কোনো গন্ধ তৈরি হবে না। রঙ ও আকৃতির কারণে দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় শসার বিকল্প হিসেবে এই রঙিন মূলাগুলোকে সালাদ হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যাবে।’
অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ রঙিন মুলার গুণাবলী নিয়ে জানান, ‘যেহেতু এটি রঙিন বর্ণের সেহেতু এটি এন্থোসায়ানিন ও এন্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এই মুলা মানুষের ডায়াবেটিস কমাবে, রক্তের সুগার ব্যাপকভাবে কমাবে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাবে, উচ্চ রক্তচাপ কমাবে, অতি নিম্ন ক্যালরির হওয়ায় ডায়েটের জন্য এটি খুবই আদর্শ এবং মুলাতে ওরাল এন্টিকার্সিনোজেনিক কম্পাউন্ড থাকে যা মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এজন্য উন্নত দেশে গোলাকার রঙিন মূলা একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সালাদ। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার রয়েছে। এই ফাইবার মানবদেহের হজমশক্তি বর্ধনে সাহায্য করে। মুলার মূলের রূপান্তরিত মূলের চেয়ে পাতায় বেশি পুষ্টিগুণ থাকে।
অধ্যাপক হারুন রঙিন মুলার ফলন সম্বন্ধে বলেন, ‘মুলা সাধারণত শীতকালীন সবজি হিসেবে সুপরিচিত। আমাদের এই রঙিন মুলার ক্ষেত্রে শীতের মৌসুমে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ দিনেই ফলন পাওয়া সম্ভব। দেশে প্রচলিত জাতগুলোর ফলন পেতে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এক মৌসুমে কমপক্ষে তিনবার ফলন পাওয়া যেতে পারে এই গোলাকার রঙিন মুলার। সাধারণত আমেরিকা ও ব্রিটেনে গোলাকার রঙিন মুলার গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১৮-২০ টন। তবে আমাদের এই পরীক্ষামূলক গবেষণায় গোলাকার রঙিন মুলার হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ১৫ থেকে ১৮ টন পর্যন্ত পাওয়া গেছে এবং মূলাপ্রতি গড় ওজন পাওয়া গেছে ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম। কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং এটি দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় ব্যাপকভাবে অবদান রাখবে।’
অধ্যাপক হারুন আরো বলেন, ‘পরীক্ষামূলক এই গবেষণাটি আমরা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নেই করেছি। তবে রঙিন মূলার জাত নির্বাচন, জাত উন্নয়ন, পুষ্টিগুণ নির্ণয়ের জন্য সরকারি, বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা এই রঙিন মুলা নিয়ে বিশদ গবেষণা ও বিশ্লেষণ করতে পারবো। শীত মৌসুমে যেহেতু কমপক্ষে ৩ বার ফলন পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থায়ন পেলে গ্রীষ্মকালসহ সারা বছরব্যাপী মূল ও শাক উৎপাদন ও পুস্টিগুণ নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব। যদি মূল তৈরি নাও হয় তবে পাতা তৈরি হবে, যা মুলা শাক হিসেবে বহুল পরিচিত। রঙিন মুলার চাষাবাদের ক্ষেত্রে রোগ বালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণও খুবই কম পাওয়া গেছে। রঙিন মুলার গ্রোথের কথা যদি বলি, তাহলে তা প্রচলিত দেশীয় মুলার চেয়ে তা কোনো অংশে কম নয়।’
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
Office: Airport haji camp
Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com
Developed by RL IT BD
মন্তব্য