হজ নিবন্ধনে সাড়া কম, বিমানভাড়া কমাতে মন্ত্রণালয়ের চিঠি
ছবি: সংগৃহীত
আগামী বছর হজে যেতে নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামীকাল রবিবার (১৫ ডিসেম্বর)। গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলে নিবন্ধন করেছেন ৫৫ হাজার ৬৫২ জন হজযাত্রী।
অথচ কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত কোটা খালি আছে ৭১ হাজার ৫৪৫টি।
হজ নিবন্ধনে সাড়া কম, বিমানের ভাড়া কমাতে মন্ত্রণালয়ের চিঠিআর মাত্র এক দিন সময় বাকি থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না হজ নিবন্ধনে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। এমন পরিস্থিতিতে হজ কোটা পূরণ করতে বিমানভাড়া কমাতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন আরো ২৭ হাজার ৮২০ টাকা কমিয়ে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা বিমানভাড়া নির্ধারণ করতে আধা-সরকারিপত্র (ডিও) দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফকে।
পত্রে খালিদ হোসেন বলেন, বিমানভাড়া কমানো হলে বাংলাদেশের হজ কোটা পূরণ সহজ হবে। সৌদি সরকারের কাছে দেশের সম্মান বৃদ্ধি পাবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে। উল্লিখিত বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে ধর্ম উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘হজের বিমানভাড়া কমাতে বিমান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছি।
তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জবাব দেননি। তার পরও প্রধান উপদেষ্টাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিমানভাড়া না কমালে আমরা প্রয়োজনে থার্ড ক্যারিয়ার ওপেন করে দেব। অর্থাৎ যেকোনো এয়ারলাইনস হজযাত্রী পরিবহন করতে পারবে।’
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে তিনটি এয়ারলাইনস হজফ্লাইট পরিচালনা করে। এর একটি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস’। বাকি দুটি এয়ারলাইনস সৌদি আরবের ‘সৌদিয়া’ ও ‘ফ্লাইনাস’।
গত ৩০ অক্টোবর ২০২৫ সালে হজে যেতে সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। ঘোষিত সাশ্রয়ী প্যাকেজ অনুযায়ী খরচ ধরা হয়েছে চার লাখ ৭৯ হাজার ২৪২ টাকা। অন্য প্যাকেজে খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। এসব প্যাকেজে ২০২৪ সালের চেয়ে বিমানভাড়া অন্তত ২৭ হাজার টাকা কমানো হয়েছে।
তবে সরকারি প্যাকেজে খাবার টাকা ৪০ হাজার ও কোরবানির জন্য ৭৫০ সৌদি রিয়াল আলাদাভাবে নিতে বলা হয়েছে হজযাত্রীদের। গত বছর খাবার টাকা প্যাকেজে যুক্ত ছিল। সরকারি প্যাকেজের সঙ্গে সমন্বয় করে বেসরকারি এজেন্সি মালিকরাও একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তারা বিমানভাড়া কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
ধর্ম উপদেষ্টার চিঠিতে বলা হয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও এজেন্সি মালিকদের আপত্তি সত্ত্বেও বিগত ২০২৩ ও ২০২৪ সালে হজযাত্রীদের বিমানভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত নির্ধারণ করা হয়। এতে হজযাত্রীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়। ২০২৫ সালের হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিগত দুই বছরের তুলনায় ভাড়া কমানো হলেও সাধারণ জনগণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিমানভাড়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এ ন এসআই) প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিমানভাড়া আরো কমানো না হলে হজ কোটা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকেও বিমানভাড়া কমানোর জন্য লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সাবেক মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিমানভাড়া কমানোর দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার পাত্তা দিচ্ছে না। যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে তাতে হজের সময় মিনা ও আরাফায় জামারা থেকে দূরে তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণ প্যাকেজে হেরেম শরিফ থেকে হজযাত্রীদের বাড়ি তিন থেকে চার মাইল দূরে রাখার কথা বলা হয়েছে।
এসব কারণসহ প্যাকেজমূল্য অস্বাভাবিক হওয়ায় মানুষ হজে যেতে অনীহা দেখাচ্ছে। এর বদলে ওমরাহর দিকে ঝুঁকছে সাধারণ মানুষ। বিমানভাড়া কমানো হলে নিবন্ধনের হার বাড়বে।’
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য