আজানের সময় কথা বললে গুনাহ হয় কি?

প্রতীকী ছবি
আরবি শব্দ আজান এর অর্থ আহ্বান বা ডাকা। এই শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইসলামের প্রধান পাঁচটি স্তম্ভের একটি। তা হলো নামাজ। মূলত জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার লক্ষ্যে মানুষকে মসজিদে একত্রিত করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু আরবি শব্দ ও বাক্যের মাধ্যমে উচ্চকণ্ঠে ডাক দেয়াই আজান। প্রতি ওয়াক্তের জন্য আজান একবার দেয়া হলেও জুমার আজান দুইবার দেয়া হয়।
মুয়াজ্জিনের আজান শুনে এর জবাব দেয়া সুন্নত। এ ক্ষেত্রে মুয়াজ্জিন যখন যে শব্দগুলো উচ্চারণ করে তখন শ্রোতাকেও সে শব্দগুলো বলতে হয়। আবু সায়ীদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যখন তোমরা আজান শুনতে পাও তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বলবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৪)
অপর হাদিসে এসেছে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল (সা.) বলেছেন, মুয়াজ্জিন যখন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলে, তখন তোমাদের কেউ যদি ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলে, তারপর মুয়াজ্জিন যখন ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে, তখন সেও ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে, অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন ‘আশহাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলে, তখন সেও ‘আশহাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলে, আর মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়া আল্লাস সালাহ’ বলে, তখন সে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলে এবং মুয়াজ্জিন যখন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলে, তখন সেও ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলল, আর সবশেষে মুয়াজ্জিন যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, তখন সেও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল- এসবই যদি সে বিশুদ্ধ অন্তরে বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৩৬)
আরেকটি হাদিসে আজান শেষে দোয়ার কথাও এসেছে। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আজান শুনে এ দোয়া করে ‘হে আল্লাহ এ পরিপূর্ণ আহ্বান ও নামাজের প্রতিষ্ঠিত মালিক আপনি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওয়াসিলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকেমে মাহমূদে পৌঁছে দিন যার অঙ্গীকার আপনি করেছেন’- কেয়ামতের দিন সে আমার শাফায়াত লাভের অধিকারী হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৭)
তবে প্রচলিত রয়েছে, মুয়াজ্জিন যখন আজান দেয় তখন কথা বললে নাকি গুনাহ হয়। আবার কেউ কেউ বলেন আজানের সময় কথা বললে ঈমান চলে যায়, কিংবা ৪০ বছরের আমল নষ্ট হয়। বস্তুত, এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। হাদিসে এমনটা উল্লেখ নেই। অধিকাংশ আলেমগণও এ বিষয়ে একমত। তাদের ভাষ্য- আজান শুনলে শ্রোতার জবাব দেয়া যেহেতু সুন্নত, তাই কেউ আজান শুনলে আজানের জবাব দিতে পারেন। তবে কথা বললে গুনাহ হবে না।
তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, পরকালে সফল হতে যেমন মহান রবের হুকুম মেনে চলা জরুরি, তেমনি রাসুল (সা.) এর আদর্শ ও তার দেখানো পথ অনুসরণ জরুরি। খোদ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে নির্দেশ করেছেন, ‘হে নবী আপনি তাদের বলে দিন- যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩১)।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য