বাংলাদেশে পান করা ৪৯ শতাংশ পানিতে ক্যানসারের জীবাণু: গবেষণা

আসলেই পানির অপর নাম জীবন। শুধু মানুষ নয়, পানি ছাড়া কোনো প্রাণীই বেশিদিন বাঁচতে পারে না। তবে পানি যেমন জীবন বাঁচায়, সেই পানিই হতে পারে বড় বিপদের কারণ। দেশের মানুষ যে পানি পান করছেন তার প্রায় অর্ধেক পানিতে বিপজ্জনকভাবে উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক বিদ্যমান। গবেষণায় উঠে এসেছে, ৪৯ শতাংশ পানিতে বিপজ্জনক মাত্রায় ক্যান্সারের জীবাণু রয়েছে। স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির হলেও দেশের মানুষ না জেনে নিয়মিত এ পানি পান করছেন। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিএলওএস ওয়ান জার্নালের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা গবেষণার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পান করার উপযোগী নমুনা পানি সংগ্রহ করেন। আর্সেনিক নিঃসরণের মাত্রা বুঝতে পানিতে অক্সিজেনের ঘনত্ব, পিএইচ এবং তাপমাত্রা পরীক্ষার পর ৪৯ শতাংশ পানিতে ক্যানসার সৃষ্টিকারী আর্সেনিকের উপস্থিতি দেখতে পান তারা। এ মাত্রার পানি পান করার ফলে মানুষের শরীরে আরসেনিকসিস হয়। যে কারণে ফুসফুস, মূত্রাশয়, কিডনি এবং ত্বকের ক্যানসার হতে পারে।
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য সংকটে জানিয়ে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, নিয়মিত প্রবল বন্যা ও ঝুঁকিপূর্ণ জলবায়ু সংকট পানির এমন মারাত্বক দূর্ষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ও মৌসুমী বন্যার কারণে পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে৷ যখন সমুদ্রের নোনা পানি মিষ্টি পানির সঙ্গে মিশে যায় তখন পলি থেকে আর্সেনিক নির্গত হয়। ২০১৮ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে যায়, বর্ষায় তীব্র বৃষ্টিপাতে প্রতি বছর দেশের গড়ে ২১ শতাংশ অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হওয়াকেও কারণ হিসেবে বলা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত পানীয় জলের নিরাপদ সীমা প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ ১০ মাইক্রোগ্রাম। বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির প্রায় ৪৯ শতাংশে আর্সেনিকের ঘনত্ব ওই সীমার বেশি। কিছু নমুনায় আর্সেনিকের ঘনত্ব রেকর্ড করা হয়েছে প্রতি লিটারে প্রায় ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মাত্রার ৪৫ গুণ।
গবেষণার লেখক ও নরউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেথ ফ্রিসবি বলেন, এই সংক্রমণ বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও দেখা গেছে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির একই রাসায়নিক প্রক্রিয়া পলি থেকে আর্সেনিক বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে যায়। একই সঙ্গে পলি থেকে নির্গত আর্সেনিক নলকূপগুলোর পানিতেও মিশছে।
দাতব্য সংস্থা ইসলামিক রিলিফের দারিদ্র্য নিরসনের জেষ্ঠ্য নীতি উপদেষ্টা জেমি উইলিয়ামস বলেন, বাংলাদেশ এরই মধ্যে মৎস্য এলাকায় কীটনাশক প্রয়োগ করে দূষণের কারণে পানির সংকটে ভুগছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, হিমালয় পর্বত ও এর পাদদেশের প্রধান নদীগুলো দ্বারা অধ্যুষিত সীমিত নিম্নভূমিতে সৃষ্ট নালাগুলো বাংলাদেশের জলবায়ুকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। অনেক মানুষ ভূমিহীন এবং বন্যাপ্রবণ জমিতে বসবাস ও চাষাবাদ করতে বাধ্য হচ্ছে। পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
এই ফলাফল জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি সতর্কবার্তা দিয়ে গবেষকরা ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ রোধে পানি পরিশোধন প্রযুক্তি ও অবকাঠামো নির্মাণসহ সম্ভাব্য সমাধানগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
Office: Airport haji camp
Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com
Developed by RL IT BD
মন্তব্য