রবিবার ৮ জুন, ২০২৫, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

দুই গাছের বিয়ে অতিথি ৫ হাজার

১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ৮:৫৪:৫১
ছবি: সংগৃহীত

বিয়ে মানেই অন্যরকম আনন্দ। চারদিকে ঢাক-ঢোল আর সানাইয়ের সুর, উলুধ্বনিও দিচ্ছেন অনেকেই, পুরোহিত পাঠ করছেন মন্ত্র। পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে ছাদনাতলা, পাঁচ হাজার অতিথিকে করানো হলো আপ্যায়ন, নানান রংয়ের আলোকসজ্জা, আলপনা, সুসজ্জিত গেট, অতিথি, এলাকাবাসী আর ভক্তদের উপস্থিতিতে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনে । তবে এবার দিনাজপুরে হয়ে গেলো অন্যরকম এক বিয়ে। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ঢেপা নদীর পাড়ে মহা ধুমধামে হয়ে গেলো বট-পাকুড়ের বিয়ে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টি শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গণে ব্যাতিক্রম এই বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে পড়ানোর জন্য নিয়োজিত ছিলেন ৫ জন পুরোহিত।

মঙ্গলবার গায়ে হলুদ, বুধবার সকাল ৬টায় অধিবাস, সকাল ১০টায় নারায়ণ পূজা, দুপুর দেড়টায় মধ্যাহ্ন প্রসাদ বিতরণ এবং দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিয়ে ও যজ্ঞানুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পরিবেশিত হবে কবি গান। কবি গান পরিবেশন করবেন চিরিরবন্দর উপজেলার বাবুল সরকার ও খানসামার চন্দনা রানী সরকার।

অতিথিদের দেওয়া নিমন্ত্রণপত্র থেকে জানা গেছে, বর বেশে পাকুড়গাছ, পিতা দিলীপ ঘোষ, মাতা দিপ্তী ঘোষ, ঠিকানা চকবাজার, সদর, দিনাজপুর। আর কনে সেজে কুমারী বটগাছ, পিতা মুন্না সাহা, মাতা পুর্নিমা সাহা, ঠিকানা চকবাজার, সদর, দিনাজপুর।

আয়োজক দিলীপ ঘোষ বলেন, প্রকৃতি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের অমঙ্গল থেকে রক্ষা করার বিশ্বাস থেকে বট-পাকুড়ের বিয়ে। অর্থাৎ অশ্বত্থাদিবৃক্ষ বটেশ্বরি-পাকুড়েশ্বর প্রতিষ্ঠা করা। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী যেভাবে মানুষের বিয়ে হয়, সেভাবে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কনে কুমারী বটগাছের মা পুর্নিমা সাহা বলেন, বটগাছ আমার মেয়ে। আর ছেলে পাকুড় গাছের মা দিপ্তী ঘোষ। আমরা প্রতিবেশী। বিয়ে ঘিরে আমরা আনন্দ-উল্লাস করছি।

ধর্মীয় গুরু সঙ্গীত কুমার সাহা বলেন, শাস্ত্রে বর্ণিত আছে ধর্মবৃক্ষ বট ও পাকুড়ের বিবাহ দর্শন মাত্রই মঙ্গল- এজন্য তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। এই বিয়ের অনুষ্ঠানে গায়ে হলুদসহ শাস্ত্র মতে সকল আয়োজন করা হয়েছে।

গাছের বিয়ের বিষয়ে দিনাজপুর নাট্য সমিতির সভাপতি চিত্ত ঘোষ বলেন, প্রকৃতি ও ব্যক্তির মঙ্গল কামনায় বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়। বাসুনিয়াপট্টি দুর্গা মন্দিরে চকবাজার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীর মানুষ প্রকৃতির মঙ্গল কামনায় এমন বিয়ের আয়োজন করেছেন। বিয়ে ঘিরে আনন্দ-উৎসব হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে,পাকুড় গাছকে মুখোশ, ধূতি, পাঞ্জাবি পড়িয়ে বরের বেশ ধারণ করানো হয়। আর পাশের বটগাছটিকে মুখোশ এবং শাড়ি পরিয়ে কনের বেশ ধারণ করানো হয়। বর-কনের জন্য সাজানো হয় বিয়ের আসন। মন্দিরের বিশাল স্থানে ররযাত্রীদের জন্য টাঙ্গানো হয় বিশাল প্যান্ডেল। বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ খেতে এসেছিলেন কয়েক হাজার অতিথি। সবজি-পোলাও, আলুভাজি, ডাল ও পায়েস খাইয়ে আপ্যায়ন করা হয় তাদের।

বিয়েতে প্রায় ৫ হাজার অতিথিকে আপ্যায়ন করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রান্নার কাজে নিয়োজিত বাবুর্চিদের প্রধান নারায়ন চন্দ্র অধিকারী। তিনি বলেন, ভোর থেকে ১৪ জন বাবুর্চি ও আমাদের সহকর্মীরা এই রান্নার কাজ করেছে।

শহরের খালপাড়া এলাকার গৃহবধূ ললিতা বালা বট-পাকুড় গাছের বিয়ে দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমাদের বিয়েতে দাওয়াত করা হয়েছিল। এ জন্য এসেছি। বিয়ের আয়োজন দেখে মুগ্ধ। বিরল উপজেলার তেঘেরা থেকে বিয়েতে আসা সতিশ চন্দ্র বর্মন বলেন,আমি এ যাবত শুধু শুনেই আসছি যে বট আর পাকুড় গাছের বিয়ের কথা। আজকে দেখলাম এই বিয়ে।। সনাতন রীতিনীতি মেনেই এই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


মন্তব্য

Editor & Publisher: Md. Abdullah Al Mamun

Office: Airport haji camp

Phone: +8801712856310 Email: sangbadbela@gmail.com

Developed by RL IT BD