কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ায় নবজাতককে বিক্রি করে দিলেন বাবা

ছবি: সংগৃহীত
কন্যাসন্তান হওয়ার কারণে নবজাতককে বিক্রি করে দিয়েছেন বাবা। স্থানীয়দের সহযোগিতায় সেই নবজাতক অবশেষে মায়ের কোলে ফিরেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ব্যক্তির সহায়তায় নবজাতককে কেনার সব টাকা পরিশোধ করে তারা মা-বাবার হাতে সন্তানকে তুলে দেন। বুধবার (৩ জুলাই) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত বাবা উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কুলালপাড়া এলাকার বাসিন্দা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. সাদ্দাম (৩৫) ও মা সুমি আক্তার (২৪)।
জানা যায়, দুই কন্যার পর তৃতীয়বার কন্যাসন্তান হওয়ায় তিন কন্যার দায় এড়াতে নবজাতককে বিক্রি করেন শিশুর বাবা মো. সাদ্দাম। স্থানীয় সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড কুলালপাড়া গ্রামের সিএনজি অটোরিকশাচালক মো. সাদ্দাম ও স্ত্রী সুমি আক্তারের সংসারে দুটি কন্যা সন্তানের পর তৃতীয় মেয়ে সন্তান জন্মায়। পুত্রসন্তানের আশায় তৃতীয়বারও কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ায় অসন্তুষ্ট ছিলেন বাবা সাদ্দাম। পরে স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের ১৪ বছরের নিঃসন্তান এক দম্পতিকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে তুলে দেন বাচ্চাটিকে।
চন্দ্রঘোনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটিকে তুলে দেওয়ার সময় বিষয়টি দেখেন অন্য এক রোগীকে রক্ত দিতে যাওয়া পারভেজ হোসাইন নামের এক যুবক। তিনি ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে বাচ্চাটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নেন স্থানীয়রা।
এই ব্যাপারে মরিয়মনগর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক হিরু বলেন, অভাবের কারণে সিএনজি অটোরিকশাচালক সাদ্দাম হাসপাতালের খরচ বাবদ কিছু সুবিধা নিয়ে মেয়েটিকে দত্তক দিয়েছিলেন। পরে স্থানীয় কয়েকজন মহৎ মানুষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাকাগুলো অনুদান দেন। বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে টাকাগুলো ফিরিয়ে দিয়ে আমরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে তুলে দিয়েছি। এ সময় ওই দম্পতিকে নগদ টাকা, খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়। এমনকি উপস্থিত অনেকে বাচ্চার মুখ দেখে আরও বেশ কিছু নগদ টাকাও উপহার দেন। বাচ্চাটির ভরণপোষণের ব্যাপারে আমরা সব সময় খবরাখবর রাখব।
শিশুটির বাবা মো. সাদ্দাম বলেন, হাসপাতালের বিল এসেছে ১২ হাজার। ওষুধ খরচ এবং চিকিৎসকের বিল বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা লেগেছে, যা আমার কাছে ছিল না। আমার আরও দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তৃতীয়টাও কন্যাসন্তান হওয়ায় বাধ্য হয়ে চিকিৎসা খরচ জোগাতে বাচ্চাকে খরচের বিনিময়ে নিঃসন্তান আত্মীয়কে দিয়েছি। এখন বাচ্চাকে ফেরত পেয়ে আমি অনেক খুশি। সবাই দোয়া করবেন, তাকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারি।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন রাতে অন্তঃসত্ত্বা সুমি ভর্তি হন চন্দ্রঘোনা জেনারেল হাসপাতালে। ২৯ জুন দুপুরে সিজারের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেন তিনি। চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার (২ জুন) বাড়ি যাওয়ার ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাড়পত্র পেয়ে নবজাতক শিশুটির মায়ের কোল বাদ দিয়ে ঠাঁই হয় দত্তক মা-বাবার কোলে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের আর্থিক সহায়তায় এবং ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় অবশেষে নিজ মায়ের কোলে ফিরল নবজাতক শিশুটি।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন: আমি পড়তে চাই, আমার চোখ লাগবে, সাত বছরের শিশু মোহাম্মদ আয়াতুল
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য