স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর ফাঁসি

প্রতীকী ছবি
স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুনের দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একই রায়ে আদালত তাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেরও আদেশ দিয়েছেন। বুধবার (৩ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুননেছা এ রায় দিয়েছেন বলে ওই আদালতের কর্মকর্তা দীপেন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন।
স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুনের দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একই রায়ে আদালত তাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেরও আদেশ দিয়েছেন। বুধবার (৩ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুননেছা এ রায় দিয়েছেন বলে ওই আদালতের কর্মকর্তা দীপেন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন।
দণ্ডিত মো. জামালের (৩৭) বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায়। চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার বাস্তুহারা কলোনিতে তার বাসা ছিল। তার স্ত্রী পারভিন আক্তারের (২৪) বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। বিয়ের পর থেকে বাকলিয়ার বাসায় স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে বাকলিয়া থানা পুলিশ খাটের ওপর কম্বল প্যাঁচানো অবস্থায় পারভিনের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় জামাল পলাতক ছিলেন। গত ১৮ জানুয়ারি পুলিশ জামালকে গ্রেপ্তার করে। জামাল স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, ২০২০ সালে পারভিনের প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম নগরীতে একটি মাজারে নিয়ে পারভিনকে বিয়ে করে জামাল। কাবিননামা না থাকলেও তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। জামালের প্রথম সংসারের স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকতেন।
জবানবন্দিতে দেয়া জামালের বক্তব্য অনুযায়ী, একসঙ্গে বসবাস শুরুর পর থেকে পারভিন জামালের আগের স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেলা নিয়ে সন্দেহ করে তার সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করতেন এবং এলাকায় সবার সামনে হেনস্থা করতেন। ঘটনার ১৫-২০ দিন আগে ঝগড়া হলে জামাল তার প্রথম স্ত্রীর কাছে চলে যান। পরে আবার পারভিনের কাছে ফেরত আসেন। এরপর তাদের মধ্যে অশান্তি আরও বাড়ে।
ঘটনার আগের দিন ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি রাত ৮টায় পারভিন ও জামালের মধ্যে ঝগড়া হয়। গভীর রাত পর্যন্ত ঝগড়ার পর তারা ঘুমিয়ে পড়েন। ১৬ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ঘুমন্ত পারভিনকে তার ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে জামাল। এরপর কম্বল পেঁচিয়ে তার লাশ বিছানায় রেখে পালিয়ে যায়।
নথিপত্রে উল্লেখ আছে, ১৭ জানুয়ারি রাতে ৯৯৯-এ বাড়ির মালিকের কল পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৮ জানুয়ারি পারভিনের বোন পোশাককর্মী বেবি আক্তার বাদী হয়ে জামালকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে পারভিনের অভিযোগ, মাজারে বিয়ের পর একসঙ্গে বসবাসের শুরু থেকে জামাল পারভিনকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করে আসছিলেন। ১৫ জানুয়ারি রাতে প্রতিবেশীরা তাদের মধ্যে ঝগড়ার আওয়াজ শুনতে পান। বিরক্ত হয়ে বাড়ির মালিক তাদের বাসা ছেড়ে দিতে বলার জন্য ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সেখানে যান। তিনি গিয়ে দেখেন, দরোজা বাইরে থেকে হুক লাগানো। সেটা খুলে ভেতরে গিয়ে তিনি দেখেন, খাটের ওপর লাশ পড়ে আছে। এরপর তিনি ৯৯৯-এ কল দেন।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের কর্মকর্তা দীপেন দাশগুপ্ত জানান, এ ঘটনায় দায়ের হওয়ার মামলা তদন্ত শেষে বাকলিয়া থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) কারিমুজ্জামান ২০২২ সালের ২৫ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৩ অক্টোবর আসামি জামালের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত এ রায় দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি জামাল আদালতে হাজির ছিলেন। পরে সাজামূলে তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য