প্রথম পর্ব
এমপি নির্বাচনে জামানত হারিয়ে এবার তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী!

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গাজীপুরের কালীগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন কালীগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন স্বপন। সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় আমজাদ হোসেন স্বপনকে নিয়ে এলাকায় চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমজাদ হোসেন স্বপন আওয়ামী লীগ নেতা হয়েও প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা করে গাজীপুর-৫ সংসদীয় আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। নির্বাচনে মোট ভোট পড়ে ১ লাখ ৫৯ হাজার। এর মধ্যে তিনি মাত্র ৩ হাজার ৮২৭ ভোট পেয়ে জামানত হারান। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। আসছে আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে ২০০৯ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েও ভরাডুবি হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রথম কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়ে সেখানেও ধরাসায়ি হন। স্বপন একজন শিল্পপতি এবং কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এর আগে তিনি ছাত্রদলের কালীগঞ্জ থানা শাখার সভাপতি ছিলেন।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৩৫ নং রোডের ১৯ নম্বর (বৃটিশ হোমস নামের) বাসার নিচতলা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে জুয়ার আসর থেকে তৎকালীন কালীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন স্বপনসহ ৫২ জন জুয়ারিকে আটক করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। এ সময় নগদ ২ লাখ ৮৩ হাজার ৪৯৫ টাকা ও জুয়া খেলার সামগ্রী জব্দ করে পুলিশ। এর আগে কালীগঞ্জ থানা ছাত্র দলের সভাপতি থাকাকালে অস্ত্র ও নারীসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এই আমজাদ হোসেন স্বপন। পরে রাতারাতি খোলস পাল্টে হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা। পরবর্তী তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হন। আর এ কারণে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মদদ পোস্ট হয়ে ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন।
সূত্র আরো জানায়, অতি সম্প্রতি এই আমজাদ হোসেন স্বপন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক লাইভে যাকাতের নি¤œ মানের শাড়ি-লুঙ্গি দিয়ে হয়েছেন সমালোচিত। এছাড়াও তিনি স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় লোক দেখানো দান করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রসার করেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় একাধিক সাধারণ ভোটারের সাথে কথা হয়। তারা জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের মদদ পোস্ট হয়ে একবার ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়া একাধিক নির্বাচনে অংশগ্রহন করেও জিততে পারেনি স্বপন। যিনি অস্ত্র ও নারীসহ এবং জুয়ার আসর থেকে গ্রেফতার হয় তার মত প্রার্থী যদি উপজেলার চেয়ারম্যান হতে চায়, এটা সমাজের সচেতন মহলের জন্য লজ্জাজনক এবং সাধারণ মানুষের জন্য হতাশাজনক। এদের মত মানুষের কারণে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কালীগঞ্জ পৌরসভার মূলগাঁও এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীর অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তুলেছেন অবৈধ কয়লার ব্যবসা। যেখানে সরকার হারাচ্ছেন বিপুল রাজস্ব। এ নিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণির একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদও প্রচার হয়েছে। তার মত প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এলাকার সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে যাবে বলেও তারা মনে করেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আমজাদ হোসের স্বপনের সাথে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমি একবার ২০০০ সালে, আরেকবার ২০১৫ সালে আটক হয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি অনেক ভালো ভালো কাজ করছি। মসজিদ, মাদরাসা, ইমাম ও মুয়াাজ্জিনদেরসহ অসহায় দরিদ্র মানুষের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এসব আপনাদের চোখে পড়ে না? কথার এক পর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেদককে আরো বলেন, আপনারা যা খুশি লিখেন। তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।
Sangbad Bela’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য